settings icon
share icon
প্রশ্ন

ঈশ্বরের প্রতি রাগ করা কি অন্যায়?

উত্তর


ঈশ্বরের প্রতি রাগান্বিত হওয়া এমন একটি বিষয় যার সাথে অনেক লোক, বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী উভয়ই যুগে যুগে মল্লযুদ্ধ করেছে। যখন আমাদের জীবনে দু:খদায়ক কিছু ঘটে, তখন আমরা ঈশ্বরকে প্রশ্ন করি “কেন?” কারণ এটি আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি। আমরা সত্যিই তাঁকে যা জিজ্ঞাসা করছি, যদিও তা এত বেশি নয়, “কেন, ঈশ্বর?” যেমন, “আমিই কেন, ঈশ্বর?” এই প্রতিক্রিয়া আমাদের চিন্তায় দু’টি ত্রুটি নির্দেশ করে। প্রথমত, বিশ্বাসী হিসেবে আমরা এই গভীর অনুভূতির অধীনে পরিচালিত হই যে, জীবন সহজ হওয়া উচিত, এবং আমাদের প্রতি দু:খজনক ঘটনা ঘটতে যাওয়া থেকে ঈশ্বরের প্রতিরোধ করা উচিত। যখন তিনি তা করেন না, তখন আমরা তাঁর প্রতি রাগ করি। দ্বিতীয়ত, যখন ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের ব্যাপ্তি বুঝতে পারি না, তখন আমরা পরিস্থিতি, অন্যান্য লোকদের নিয়ন্ত্রণ করার তাঁর ক্ষমতার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলি, এবং এভাবেই তারা আমাদের প্রভাবিত করে। তখন আমরা ঈশ্বরের প্রতি রাগান্বিত হই, কারণ- মনে হয় ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং বিশেষ করে আমাদের জীবনের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। যখন আমরা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, তখন এর কারণ হল আমাদের দুর্বল মানবদেহ আমাদের নিজেদের হতাশা এবং আমাদের ঘটনাগুলির উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণের অভাবের সাথে লড়াই করছে। যখন ভাল কিছু ঘটে, তখন আমরা সবাই প্রায়ই এটিকে আমাদের নিজেদের অর্জন এবং সাফল্যের জন্য দায়ী করি। যখন খারাপ কিছু ঘটে, যাহোক, তখন আমরা ঈশ্বরকে অনুযোগ করি, এবং তা প্রতিরোধ না করার জন্য আমরা তাঁর প্রতি ক্রুদ্ধ বা রাগান্বিত হই, যা আমাদের চিন্তার প্রথম ত্রুটি নির্দেশ করে- যে আমরা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে দায়মুক্ত হওয়ার যোগ্য।

দুঃখজনক ঘটনাগুলো ভয়ংকর সব সত্যকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে যেগুলোর উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এক এক সময়ে কিংবা অন্য কোন সময়ে আমরা সবাই চিন্তা করি যে, আমরা পরিস্থিতির ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কিন্তু বাস্তবে ঈশ্বর তাঁর সমস্ত সৃষ্টির দায়িত্বে আছেন। সব কিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে ও তাঁর অনুমতিক্রমে ঘটে থাকে। ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া একটি চড়ুই পাখীও মাটিতে পড়ে না বা আমাদের মাথা থেকে একটি চুলও পড়ে না (মথি ১০:২৯-৩১ পদ)। আমরা অভিযোগ করতে পারি, রাগ করতে পারি এবং যা ঘটেছে তার জন্য ঈশ্বরকে অনুযোগ করতে পারি। তবুও আমরা যদি তাঁর উপর বিশ্বাস রাখি এবং তাঁর কাছে আমাদের গভীর মনোবেদনা ও কষ্ট অর্পণ করি, তাঁর উপর আমাদের নিজেদের ইচ্ছাকে কার্যকর করতে চেষ্টা করার গহীত পাপকে অস্বীকার করি, তবে তিনি আমাদের যে কোন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁর শান্তি এবং শক্তি দিতে পারেন এবং তিনি তা আমাদের দিয়ে থাকেন (১করিন্থীয় ১০:১৩ পদ)। যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেকেই তাঁর পক্ষে প্রকৃত সাক্ষ্য তুলে ধরতে পারেন। আমরা নানা কারণে ঈশ্বরের প্রতি রাগান্বিত হতে পারি, তাই আমাদের সকলকে এক পর্যায়ে মেনে নিতে হবে যে, এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না কিংবা এমনকি সেগুলোকে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে বুঝতেও পারি না।

সমস্ত পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার সাথে সাথে অবশ্যই তাঁর অন্যান্য গুণাবলী সম্পর্কে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি থাকতে হবে: প্রেম, দয়া, উদারতা, সাধুতা, ধার্মিকতা, ন্যায়বিচার এবং পবিত্রতা। যখন আমরা ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের মাধ্যমে আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলি দেখি- যা আমাদের বলে যে, আমাদের ভালোর জন্য আমাদের প্রেমময় এবং পবিত্র ঈশ্বরের সবকিছু একসংগে কাজ করে (রোমীয় ৮:২৮), এবং আমাদের জন্য তাঁর একটি নিখুঁত পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য রয়েছে যা ব্যর্থ হয় না (যিশাইয় ১৪:২৪, ৪৬:৯-১০)- তখন আমরা আমাদের সমস্যাগুলি ভিন্ন আলোকে দেখতে শুরু করি। আমরা শাস্ত্র থেকেও জানি যে, এই জীবন কখনই অবিরাম আনন্দ এবং সুখের হবে না। বরং ইয়োব আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, “কিন্তু অগ্নির স্ফুলিঙ্গ যেমন ঊর্ধ্বে উঠে, তেমনি মনুষ্য আয়াসের নিমিত্ত জন্মে” (ইয়োব ৫:৭ পদ), এবং সেই জীবন ছোট এবং “উদ্বেগে পরিপূর্ণ” (ইয়োব ১৪:১ পদ)। আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য খ্রীষ্টের কাছে আসার মানে এই নয় যে, আমরা সমস্যা থেকে মুক্ত জীবনের নিশ্চয়তা পাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে, যীশু বলেছিলেন, “জগতে তোমরা ক্লেশ পাবে, কিন্তু তিনি জগত জয় করেছেন” (যোহন ১৬:৩৩ পদ), আমাদের চারপাশে বিপর্যস্ত অবস্থা থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের মাঝে শান্তি দিতে সক্ষম (যোহন ১৪:২৭ পদ)।

একটি বিষয় নিশ্চিতঃ অযথা রাগ করা হলো পাপ (গালাতীয় ৫:২০; ইফিষীয় ৪:২৬-২৭, ৩১; কলসীয় ৩:৮ পদ)। অধার্মিকতাপূর্ণ রাগ হলো আত্ম-পরাজয়কারী, শয়তানকে আমাদের জীবনে পা রাখার জায়গা দেয় এবং আমরা যদি এটি ধরে রাখি তবে আমাদের আনন্দ এবং শান্তি নষ্ট করতে পারে। আমাদের রাগ ধরে রাখা আমাদের হৃদয়ের তিক্ততা এবং বিরক্তি জন্মানোর অনুমতি দেবে। আমাদের অবশ্যই এটি প্রভুর কাছে স্বীকার করতে হবে, এবং তারপর তাঁর ক্ষমায়, আমরা তাঁর কাছে সেই অনুভূতিগুলি ছেড়ে দিতে পারি। আমাদের দুঃখ, রাগ এবং বেদনায় প্রায়ই প্রার্থনায় প্রভুর সামনে যেতে হবে। ২শমূয়েল ১২:১৫-২৩ পদে বাইবেল আমাদের বলে যে, দায়ূদ তার অসুস্থ শিশুর পক্ষে অনুগ্রহের সিংহাসনের সামনে গিয়েছিলেন, উপবাস করেছিলেন, কেঁদেছিলেন এবং মৃত্যুর হাত এড়াতে তার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। যখন শিশুটি মারা গেল, তখন দায়ূদ উঠে প্রভুর উপাসনা করলেন এবং তারপর তার দাসদের বললেন, তিনি জানেন যে, তার শিশুটি কোথায় আছে এবং সে একদিন ঈশ্বরের সামনে তার সাথে থাকবে। দায়ূদ শিশুটির অসুস্থতার সময় ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করেছিলেন, এবং পরে তিনি তাঁর সামনে উপাসনায় প্রণিপাত করেছিলেন। এটি হলো একটি বিস্ময়কর সাক্ষ্য। ঈশ্বর আমাদের হৃদয় জানেন, এবং আমরা সত্যিই কেমন অনুভব করি তা লুকানোর চেষ্টা করা অর্থহীন, তাই এ সম্পর্কে কথা বলা আমাদের দুঃখকে পরিচালনা করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। যদি আমরা তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় ঢেলে দিয়ে বিনয়ের সাথে তা করি, তবে তিনি আমাদের মাধ্যমে কাজ করবেন, এবং ক্রমাগতভাবে আমাদেরকে তাঁর মতো করে তুলবেন।

মূল কথা হলো, আমরা কি আমাদের জীবন এবং এবং আমাদের প্রিয়জনদের জীবনে সবকিছুর জন্য ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে পারি? অবশ্যই আমরা পারি! আমাদের ঈশ্বর করুণাময়, অনুগ্রহ এবং প্রেমে পূর্ণ, এবং খ্রীষ্টের শিষ্য হিসেবে আমরা সমস্ত কিছুর সাথে তাঁর উপর বিশ্বাস রাখতে পারি। যখন আমাদের সাথে দুঃজনক ঘটনা ঘটে, আমরা জানি যে, ঈশ্বর আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী করতে এবং আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে, পরিপক্ক এবং পূর্ণতার দিকে নিয়ে আসতে তা ব্যবহার করেন (গীতসংহিতা ৩৪:১৮; যাকোব ১:২-৪ পদ)। তারপর, আমরা অন্যান্যদের কাছে সান্ত্বনাকারী সাক্ষ্য হতে পারি (২করিন্থীয় ১:৩-৫ পদ)। যাহোক, এটি করা সহজ। এটির জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন আমাদের নিজস্ব ইচ্ছাকে তাঁর কাছে সমর্পণ করা, ঈশ্বরের বাক্যে দেখা তাঁর গুণাবলীর একটি বিশ্বস্ত অধ্যয়ন হিসেবে, অনেক প্রার্থনা এবং আমরা যা শিখি তা আমাদের নিজস্ব পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা। এটি করার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে এবং পরিপক্ক হবে, পরবর্তীতে দুঃখজনক ঘটনা যা অবশ্যই ঘটবে তার মধ্য দিয়ে তাঁকে আমাদের জীবনে পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস জোরালো করতে বিষয়টিকে আরও সহজ করে তুলবে।

সুতরাং, উপরোক্ত প্রশ্নটির সরাসরি উত্তর হবে হ্যাঁ, ঈশ্বরের প্রতি রাগ করা অন্যায়। ঈশ্বরের প্রতি রাগ হলো তাঁকে বিশ্বাস করতে আমাদের অক্ষমতা বা অনিচ্ছার ফল, এমনকি যখন আমরা বুঝতে পারি না তিনি কি করছেন সেই পরিস্থিতিওে। ঈশ্বরের প্রতি রাগ হলো মূলতঃ ঈশ্বরকে বলা যে, তিনি এমন কিছু ভুল করেছেন, যা তিনি কখনও করেন না। আমরা যখন রাগান্বিত, হতাশ বা তাঁর প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ হই তখন কি ঈশ্বর বুঝতে পারেন? হ্যাঁ, তিনি আমাদের হৃদয় জানেন এবং তিনি জানেন যে, এই জগতের জীবন কতটা কঠিন এবং বেদনাদায়ক হতে পারে। ঈশ্বরের প্রতি রাগ করা এটি কি ঠিক? একেবারে না। ঈশ্বরের প্রতি রাগ করার পরিবর্তে আমাদের উচিত প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে আমাদের হৃদয় ঢেলে দেওয়া এবং তারপর বিশ্বাস করা যে, তিনি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে আছেন এবং তাঁর পরিকল্পনা নিখুঁত ও বিশুদ্ধ।

English


বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

ঈশ্বরের প্রতি রাগ করা কি অন্যায়?
© Copyright Got Questions Ministries