settings icon
share icon
প্রশ্ন

ঈশ্বর কি ন্যায্য বা নিরপেক্ষ?

উত্তর


অনেক লোকের মনেই এরূপ ধারণা বিদ্যমান যে, ন্যায়পরায়ণতা হলো প্রত্যেকেই তার যা প্রাপ্য তা পায়। এই সংজ্ঞা অনুসারে যদি ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে “ন্যায্য বা নিরপেক্ষ” হতেন, তবে আমরা সকলেই আমাদের পাপের জন্য অন্তকাল নরকে কাটিয়ে দিতাম, যা আমাদের প্রাপ্য। আমরা সবাই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছি (রোমীয় ৩:২৩ পদ) এবং সেই জন্য আমরা অনন্ত মৃত্যুর যোগ্য (রোমীয় ৬:২৩ পদ)। যদি আমরা “ন্যায্যভাবে” আমাদের যা প্রাপ্য তা পাই, তবে আমরা আগুনের হ্রদে পতিত হব (প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪-১৫ পদ)। কিন্তু ঈশ্বর করুণাময় এবং মঙ্গলময়, তাই তিনি যীশু খ্রীষ্টকে আমাদের জায়গায় আমাদের প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে (২করিস্থীয় ৫:২১ পদ) ক্রুশে মৃত্যুবরণ করতে পাঠিয়েছিলেন। আমাদের যা করতে হবে তা হলো খ্রীষ্টে বিশ্বাস করা, আর তাহলেই আমরা উদ্ধার পাব, এবং আমরা স্বর্গে একটি অনন্ত গৃহ পাব (যোহন ৩:১৬ পদ)। সেই পাপের উপযুক্ত শাস্তিস্বরূপ খ্রীষ্টকে বলিরূপে উৎসর্গের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর “ন্যায্যতা” বজায় রাখলেন।

ন্যায্য শব্দের প্রতিশব্দ ন্যায়পরায়ণ, এবং বাইবেল দ্ব্যর্থহীনভাবে এটি স্বীকার করে যে, ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ: “তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্মময় ও সরল” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, গণনাপুস্তক ১৯:৭; রোমীয় ৯:১৪ এবং ২ থিষলনীকীয় ১:৬ পদ)। তিনি নিরপেক্ষ, সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ, আর সেই জন্যই ঈশ্বর “ন্যায্য”। অযিহূদীদের বাড়ীতে দাঁড়িয়ে পবিত্র আত্মার কাজ দেখে পিতর বলেছিলেন, “আমি সত্যিই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়” (প্রেরিত ১০:৩৪-৩৫ পদ)। ঈশ্বর সুনিদিষ্ঠভাবেই ন্যায্য বা ন্যায়পরায়ণ। তিনি কারও সাথে অন্যায় করেন না।

ঈশ্বরের প্রেমময় অনুগ্রহ সত্ত্বেও, কেউ-ই তার নিজের উপর বিশ্বাস করবে না (রোমীয় ৩:১০-১৮ পদ)। রোমীয় ৮:২৯-৩০ পদ অনুসারে, ঈশ্বর পূর্বেই নির্ধারণ করেছিলেন যে, কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তাঁর পুত্রের অনুরূপ করা হবে, বলা হবে, ন্যায়সঙ্গত করা হবে এবং মহিমান্বিত করা হবে। পবিত্র বাইবেলে উল্লেখিত অসংখ্য পদ খ্রীষ্টবিশ্বাসীরা যে ঈশ্বরকর্তৃক বাছাইকৃত তার প্রমাণ প্রদান করে, (মথি ২৪:২২, ৩১; মার্ক ১৩:২০, ২৭; রোমীয় ৮:৩৩, ৯:১১, ১১:৫-৭, ২৮; কলসীয় ৩:১২; ১থিষলনীকীয় ১:৪; ১তীমথিয় ৫:২১; ২তীমথিয় ২:১০; তীত ১:১, ১পিতর ১:১-২, ২:৯; ২পিতর ১:১০ পদ)। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, যারা ন্যায়পরায়ণতায় বিশ্বাস করে তাদের দৃষ্টিতে প্রত্যেকের সাথে একইভাবে আচরণ করা প্রয়োজন- এটিকে “ন্যায্য”বলে মনে হয় না। অনুসন্ধানে এটি দেখা যাচ্ছে যে, ঈশ্বর সব মানুষের সাথে সমান আচরণ করছেন না । যদিও এটি এইভাবে দেখানো হতে পারে। বাইবেল আরও বলে যে, ঈশ্বর নিজের সম্পর্কে যা প্রকাশ করেছেন তার প্রতি আমাদের অবশ্যই সাড়া প্রদান করতে হবে। রোমীয় ১:২০ পদ আমাদের বলে- “ফলতঃ তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে, এই জন্য তাঁহাদের উত্তর দিবার পথ নাই।”

যারা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস করে তারা সবাই উদ্ধার পাবে (যোহন ৩:১৬; রোমীয় ১০:৯-১০ পদ)। রাহবের মতো যারা তাঁর সম্বন্ধে জেনে তাঁর উপর নির্ভর করে তাঁর কাছে ফিরে আসে, তারা উদ্ধার বা রক্ষা পাবে। বাইবেল কখনই বর্ণনা করে না যে, ঈশ্বর এমন কাউকে প্রত্যাখ্যান করেন যে তাঁকে বিশ্বাস করে বা যারা তাঁকে খুঁজছে তাদের ফিরিয়ে দেয় (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৯ পদ)। ঈশ্বরের সার্বভৌম ও পূর্বে নিধারণকৃত সত্য এবং মানুষের দায়িত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক এক নয়। কোন না কোনভাবে ঈশ্বরের রহস্য কোন ব্যক্তির সাহায্যে তাঁর পূর্বনির্ধারিত কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে যা ঈশ্বর আগেই স্থির করে রেখেছেন (যোহন ৬:৪৪ পদ), এবং পরিত্রাণে বিশ্বাসী করে তোলেন (রোমীয় ১:১৬ পদ)। যারা উদ্ধার বা রক্ষা পাবে ঈশ্বর তাদের পূর্বনির্ধারণ করেছেন, এবং উদ্ধার প্রাপ্ত হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই খ্রীষ্টকে বেছে নিতে হবে। উভয় বিষয়ই সমান সত্য। যদিও তা মানুষের চোখে অন্যায্য বলে মনে হতে পারে। যারা অ-উদ্ধারপ্রাপ্ত ঈশ্বর যে তাদের উদ্ধার করছেন তা অন্যায্য নয়। যারা তাঁর কাছে ফিরে যেতে অস্বীকার করে তারা তাদের যা প্রাপ্য এবং বাসনা করে তারা তা পায়।

ঈশ্বর যাদেরকে মনোনীত করেছেন তারা ঈশ্বরের ভালবাসা এবং অনুগ্রহ পাচ্ছে। কিন্তু যখন ঈশ্বর আমাদের হৃদয় আকর্ষণ করেন এবং আমাদের মন খুলে দেন, তখন আমাদের চারপাশের সৃষ্টির রহস্য (গীতসংহিতা ১৯:১-৩ পদ) এবং আমাদের বিবেক (রোমীয় ২:১৫ পদ) এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তাঁর আহ্বানে যারা সাড়া দেয় না তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তাদের যা প্রাপ্য তারা তা পাবে। তাদের প্রতি ঘটা শাস্তি ন্যায্য (যোহন ৩:১৮, ৩৬ পদ)। যারা তাঁকে বিশ্বাস করে তারা তাদের প্রাপ্যের চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছে। যদিও কাউকেই তার প্রাপ্যের বাইরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। ঈশ্বর কি ন্যায্য বা নিরপেক্ষ? হ্যাঁ, তিনি করুণাময়, দয়ালু ও ক্ষমাশীল।

English


বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

ঈশ্বর কি ন্যায্য বা নিরপেক্ষ?
© Copyright Got Questions Ministries