প্রশ্ন
১বংশাবলি পুস্তক
উত্তর
লেখকঃ ১বংশাবলি পুস্তকটি বিশেষভাবে লেখক হিসেবে কারও নাম প্রকাশ করে না। ঐতিহ্য বা প্রথানুযায়ী মনে করা হয় যে, ইষ্রা ১ ও ২বংশাবলি পুস্তক লিখেছেন।
লেখার সময়কালঃ ১বংশাবলি পুস্তকটি খুব সম্ভবত ৪৫০ ও ৪২৫ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে।
লেখার উদ্দেশ্যঃ ১ ও ২বংশাবলি পুস্তক দু’টির মধ্যে ১ ও ২শমূয়েলে উল্লেখিত অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ১ ও ২বংশাবলি পুস্তকে অনেক বেশী পরিমাণে পালকীয় বা যাজকত্ব বিষয়ক সময়কালের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ১বংশাবলি পুস্তকটি নির্বাসনের পর ঈশ্বরের আরাধনা বা উপাসনা করতে যারা ফিরে এসেছিল সেই সব ইস্রায়েলীয়দের সাহায্য করার জন্য লেখা হয়েছিল। এই ইতিহাস দক্ষিণে অবস্থিত রাজ্যসমূহ, যিহূদী জাতিগোষ্ঠী, বিন্যামিন ও লেবী গোষ্ঠীগুলোর উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করে থাকে। এই সমস্ত জাতিগোষ্ঠীগুলো ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হতে অনেক বেশী মাত্রায় আগ্রহী ছিল।
প্রধান পদসমূহঃ ১বংশাবলি ১১:১-২ পদ, “পরে সমস্ত ইস্রায়েল হিব্রোণে দায়ূদের নিকটে একত্র হইয়া কহিল, দেখুন, আমরা আপনার অস্থি ও মাংস। পূর্বে যখন শৌল রাজা ছিরৈন, তখনও আপনিই ইস্রায়েলকে বাহিরে লইয়া যাইতেন ও ভিতরে আনিতেন; আর আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনাকে বলিয়াছিলেন, তুমিই আমার প্রজা ইস্রায়েলকে চরাইবে ও তুমিই আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক হইবে।”
১বংশাবলি ২১:১৩ পদ, “দায়ূদ গাদকে কহিলেন, আমি বড়ই বিপগ্রস্ত হইলাম; এক্ষণে আমি সদাপ্রভুর হস্তে পড়ি, কেননা তাঁহার করুণা প্রচুর; কিন্তু আমি যেন মনুষ্যের হস্তে না পড়ি।”
১বংশাবলি ২৯:১১ পদ, “হে সদাপ্রভু, মহত্ত্ব, পরাক্রম, গৌরব, জয় ও প্রতাপ তোমরাই; কেননা স্বর্গে যাহা কিছু আছে সকলই তোমার; হে সদাপ্রভু, রাজ্য তোমারই, এবং তুমি সকলের মস্তকরূপে উন্নত।”
সারসংক্ষেপঃ ১বংশাবলি পুস্তকটির প্রথম ৯টি অধ্যায় বিভিন্ন তালিকা ও বংশবৃত্তান্ত রচনায় ব্যবহৃত হয়েছে। পুস্তকটির বাকী অধ্যায়গুলোতে পরবর্তী তালিকাসমূহ ও বংশবৃত্তান্তগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে দায়ূদের সিংহাসনে আরোহণ ও তার যাবতীয় কাজগুলো বিবৃত হয়েছে। পুস্তকটির সমাপ্তি টানা হয়েছে দায়ূদের ছেলে শলোমনের ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ১বংশাবলি পুস্তকের সংক্ষিপ্ত রূপরেখা নিম্নরূপঃ ১:১-৯: ২৩ পদ- বাছাইকৃত বংশতালিকাসমূহ; ৯:২৪-১২:৪০ পদ- দায়ূদের সিংহাসনে আরোহণ; ১৩:১-২০:৩০ পদ- দায়ূদের রাজত্ব।
পূর্বাভাসঃ ১বংশাবলি ১৬:৩৩ পদে উল্লেখিত দায়ূদের গানের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ জ্ঞাপনমূলক যেখানে তিনি “পৃথিবীর বিচার করতে” ঈশ্বরের আসার সময়কালের কথা উল্লেখ করেছেন। এই পূর্বাভাসটি মথি ২৫ অধ্যায়েও প্রদান করা হয়েছে যেখানে যীশু যখন এই পৃথিবীর বিচার করতে আবার আসবেন সেই সময়কালের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বুদ্ধিমতী দশ কুমারীর গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের সতর্ক করেছেন এই বলে যে, খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা আবৃতহীন অবস্থায় যাদেরকে পাওয়া যাবে তাদেরকে “গভীর অন্ধকারে” নিক্ষেপ করা হবে। তিনি তাঁর লোকদের উৎসাহ যোগান যেন তারা তাঁর আগমনের জন্য প্রস্তুত থাকে, কারণ বিচারের সময় তিনি মেষদেরকে ছাগ থেকে আলাদা করবেন।
দায়ূদের চুক্তির অংশ যেটি ঈশ্বর ১৭ অধ্যায়ে পুনরায় উল্লেখ করেছেন যার মধ্যে ভবিষ্যৎ মশীহের কথা বলা হয়েছে যিনি হবেন দায়ূদের বংশধর। ১৩-১৪ পদে একজন পুত্রের কথা বর্ণনা করা হয়েছে যিনি ঈশ্বরের গৃহকে আবার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং যাঁর সিংহাসন চিরকালের জন্য স্থাপন করা হবে। এটি কেবলমাত্র যীশুর কথাই উল্লেখ করতে পারে।
বাস্তব বা কার্যকর প্রয়োগঃ ১বংশাবলিতে উল্লেখিত বংশতালিকাকে নীরস বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ঈশ্বর তাঁর প্রতিটি সন্তানকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, এমন কি আমাদের মাথার চুলগুলোর সংখ্যাও তাঁর জানা (মথি ১০:৩০ পদ)। আমরা এটি ভেবে স্বস্তিবোধ করতে পারি যে, আমরা কে এবং আমরা যা কিছু করি তার সব কিছুই ঈশ্বরের মনে গেঁথে আছে। যদি আমরা খ্রী্ষ্টেতে থাকি, তাহলে মেষশাবকের জীবন পুস্তকে চিরদিনের জন্য আমাদের নাম লেখা থাকবে (প্রকাশিত বাক্য ১৩:৮ পদ)।
ঈশ্বর তাঁর লোকদের প্রতি বিশ্বস্ত এবং তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা পালনে বদ্ধপরিকর। ১বংশাবলি পুস্তকে আমরা দায়ূদের ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেই প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা দেখতে পাই (১বংশাবলি ১১:১-৩ পদ)। আমরা এটি বিশ্বাস করতে পারি যে, একইভাবে আমাদের প্রতিও তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণতা পাবে। তিনি যারা তাঁকে অনুসরণ করে, যারা অনুতাপ সহকারে খ্রীষ্টের কাছে আসে এবং যারা তাঁর বাক্যের বাধ্য তাদের আশীর্বাদ দানের প্রতিজ্ঞা করেছেন।
বাধ্যতা আশীর্বাদ বয়ে আনে; অবাধ্যতা বিচার বা দন্ডাজ্ঞা বয়ে আনে। ১বংশাবলি পুস্তকটির মতো ১ ও ২শমূয়েল এবং ১ ও ২রাজাবলি পুস্তকটিতেও বিভিন্ন ধরনের পাপ, অনুতাপ বা অনুশোচনা, ক্ষমা এবং ইস্রায়েল জাতির পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তালিকা উল্লেখ করে। একইভাবে, আমরা যখন প্রকৃত অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর কাছে ফিরে আসি, তখন তিনি আমাদের প্রতি ধৈর্য ধরেন ও আমাদের পাপ ক্ষমা করেন (১যোহন ১:৯ পদ)। এই কারণে আমরা স্বস্তি বা আরাম বোধ করতে পারি যে, তিনি আমাদের দুঃখ-কষ্টজনিত প্রার্থনা শুনেন, তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করেন, তিনি আমাদেরকে তাঁর সাথে সংগ্রথিত করেন এবং আমাদেরকে আনন্দ বা উল্লাসপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে রাখেন।
English
১বংশাবলি পুস্তক