প্রশ্ন
২বংশাবলি পুস্তক
উত্তর
লেখকঃ ২বংশাবলি পুস্তকটি বিশেষভাবে লেখক হিসেবে কারও নাম প্রকাশ করে না। ঐতিহ্য বা প্রথানুযায়ী মনে করা হয় যে, ইষ্রা ১ ও ২ বংশাবলি পুস্তকটি লিখেছেন।
লেখার সময়কালঃ ২বংশাবলি পুস্তকটি খুব সম্ভবত ৪৫০ ও ৪২৫ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে।
লেখার উদ্দেশ্যঃ ১ ও ২বংশাবলি পুস্তক দু’টির মধ্যে ১ ও ২শমূয়েলে উল্লেখিত অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই তথ্যাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। ১ ও ২বংশাবলি পুস্তকে অনেক বেশী পরিমাণে পালকীয় বা যাজকত্ব বিষয়ক সময়কালের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। ২বংশাবলি পুস্তকটি মূলত জাতির মধ্যে বিরাজমান ধর্মীয় ইতিহাস বা কাহিনী মূল্যায়নের প্রয়োজনীতার বিষয়টি তুলে ধরে।
প্রধান পদসমূহঃ ২বংশাবলি ২:১ পদ, “পরে শলোমন সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক গৃহ ও আপনার রাজ্যের নিমিত্ত এক গৃহ নির্মাণ করিতে স্থির করিলেন।”
২বংশাবলি ২৯:১-৩ পদ, “হিষ্কিয় পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং ঊনত্রিশ বৎসর কাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাহার মাতার নাম অবিয়া, তিনি সখরিয়ের কন্যা। হিষ্কিয় আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের সমস্ত কার্যানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহাই করিতেন। তিনি আপন রাজত্বের প্রথম বৎসরের প্রথম মাসে সদাপ্রভুর গৃহের কবাট সকল খুলিলেন, এবং মেরামত করিলেন।”
২বংশাবলি ৩৬:১৪ পদ, “আর প্রধান যাজকেরা সকলে ও প্রজারা জাতিগণের সমস্ত ঘৃণার্হ ক্রিয়ানুসারে বহুল সত্যলঙ্ঘন করিল, এবং সদাপ্রভু যিরূশালেমে আপনার যে গৃহ পবিত্র করিয়াছিলেন, তাহা অশুচি করিল।”
২বংশাবলি ৩৬:২৩ পদ, “পারস্য-রাজ কোরস এই কথা কহেন, স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দান করিয়াছেন, আর তিনি যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্মাণ করিবার ভার আমাকে দিয়াছেন। তোমাদের মধ্যে, তাঁহার সমস্ত প্রজার মধ্যে, যে কেহ হউক, তাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহার সহবর্তী হউন, সে সেখানে যাউক।”
সারসংক্ষেপঃ ২বংশাবলি পুস্তকটি যিহূদার দক্ষিণ রাজ্যের ইতিহাসের কথা প্রকাশ করে, শলোমনের রাজত্ব থেকে শুরু করে বাবিলে নির্বাসনের সমাপ্তি পর্যন্ত। যিহূদার পতন হতাশাজনক বটে, কিন্তু এটি আত্মিক সংস্কারবাদীদের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করে যারা খুবই আন্তরিকতার সাথে চেয়েছিলেন যেন লোকেরা ঈশ্বরের দিকে ফিরে আসে। এখানে মন্দ বা খারাপ রাজা অথবা ভাল রাজাদের পরাজয়ের বিষয়ে খুবই স্বল্প আকারে কথা বলা হয়েছে। কেবলমাত্র ভাল বা উত্তম যা কিছু তা হলো জোর দেওয়া বা শাসন করা। ২বংশাবলি পুস্তকে যখন পালকীয় বা যাজকীয় কাজের উপর বেশী গুরুত্বারোপ করা হয়, তখন সেখানে মিথ্যা দেব/দেবীর উপাসনা ও যিরূশালেম মন্দিরকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করার কারণে ইস্রায়েলের উত্তরের রাজাদের বিষয়টি খুব কদাচিৎই উল্লেখ করা হয়েছে। ২বংশাবলি পুস্তকটির উপসংহার টানা হয়েছে যিরূশালেম ও এর মন্দিরের চূড়ান্ত ধ্বংসের মধ্য দিয়ে।
পূর্বাভাসঃ পুরাতন নিয়মে উল্লেখিত রাজা ও মন্দির সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা সেগুলো একজন প্রকৃত রাজাদের রাজার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই- যীশু খ্রীষ্ট-এবং পবিত্র আত্মার মন্দির- তাঁর লোকজন। এমন কি ইস্রায়েলের ভাল বা উত্তম রাজারা লোকদেরকে পাপের মধ্যে নিয়ে ভুল করেছেন ও তাদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা দেন নি। কিন্তু রাজাদের রাজা যখন এই পৃথিবীতে বাস করতে ও হাজার বছর ধরে শাসন করতে আসবেন তখন তিনি দায়ূদের উত্তরাধিকারী হিসেবে সমস্ত পৃথিবীর উপর তাঁর সিংহাসন স্থাপন করবেন। কেবলমাত্র তখনই আমরা একজন সত্যিকারের রাজাকে পাব যিনি সমস্ত ধার্মিকতা ও পবিত্রতায় রাজত্ব করবেন যা ইস্রায়েলের উত্তম বা ভাল রাজারা কেবল স্বপ্নেই কল্পনা করতে পারতো।
ঠিক একইভাবে, রাজা শলোমন কর্তৃক নির্মিত বিশাল মন্দিরও চিরস্থায়ী হওয়ার মতো করে গঠিত হয় নি। মাত্র ১৫০ বছর পরেই এটিকে ক্ষয় ও সৌন্দর্যহানি থেকে রক্ষা করতে ইস্রায়েলের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা প্রতিমাপূজার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল তাদের দ্বারা পুনরায় মেরামত করার প্রয়োজন হয়েছিল (২রাজাবলি ১২ অঃ)। কিন্তু পবিত্র আত্মার মন্দির- যারা খ্রীষ্টেতে অবস্থান করে- তারা চিরকাল বাস করবে। আমরা যারা খ্রীষ্টেতে আছি, তারাই সেই মন্দির, যা কোন হাত দিয়ে তৈরী করা হয় নি, কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ীই তৈরী করা হয়েছে (যোহন ১:১২-১৩ পদ)। যে আত্মা আমাদের মধ্যে বাস করেন তিনি কখনই আমাদের ছেড়ে যাবেন না এবং তিনি আমাদেরকে ঈশ্বরের অনুগ্রহের তালুতে করে নিরাপদে রাখবেন (ইফিষীয় ১:১৩; ৪:৩০ পদ)। পৃথিবীর কোন মন্দিরই এরূপ প্রতিজ্ঞা বজায় রাখতে পারে না।
বাস্তব বা কার্যকর প্রয়োগঃ বংশাবলি পুস্তকের প্রতিটি পাঠককে আহ্বান জানানো হচ্ছে যেন তারা পূর্বকার প্রতিটি প্রজন্মকে মূল্যায়ন করেন এবং উপলব্ধি করেন কেন তারা তাদের বাধ্যতার জন্য পুরস্কার ও মন্দ বা খারাপ কাজের জন্য শাস্তি পেয়েছিল। কিন্তু আমরাও এটিকে আমাদের নিজেদের মতো করে সম্মিলিত কিংবা এককভাবে তুলনা করব। যদি আমরা কিংবা আমাদের জাতি অথবা আমাদের মন্ডলী এরূপ কঠিন অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে, তাহলে আমাদের জন্য এটি সুবিধার যে, আমরা আমাদের বিশ্বাস এবং আমরা কিভাবে সেই সব বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করতে হবে তার তুলনা করতে এই অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারব, যেগুলো ইস্রায়েল জাতি তাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজাদের দ্বারা লাভ করেছিল। ঈশ্বর পাপকে ঘৃণা করেন এবং এটিকে তিনি কোনভাবেই বরদাস্ত করেন না। কিন্তু বংশাবলি পুস্তক যদি আমাদের কিছু শিখিয়ে থাকে, সেটি হচ্ছে ঈশ্বর পাপকে ক্ষমা করতে এবং যারা নম্র ও অনুতাপ সহকারে প্রার্থনা করবে তিনি তাদের অবশ্যই আরোগ্য করবেন, (১যোহন ১:৯ পদ)।
যদি আপনার ঈশ্বরের কাছে কিছু চাওয়ার থাকে, তাহলে আপনি তাঁর কাছে কি চাইবেন? প্রচুর ধনসম্পত্তি? আপনার জন্য ও আপনি যাকে ভালবাসেন তার জন্য সুস্থ ও সবল স্বাস্থ্য? জীবন ও মৃত্যুর উপর কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা? এ বিষয়ে চিন্তা করাটা বড়ই আশ্চর্যজনক, তাই নয় কি? কিন্তু এর চেয়েও আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঈশ্বর ঠিক এভাবেই শলোমনের কাছে বিষয়টি রেখেছিলেন, কিন্তু তিনি এর কোনটিই পছন্দ করেন নি। তিনি ঈশ্বরের কাছে যে বিষয়টি চাইলেন সেটি হলো ঈশ্বর তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন ও যা করতে বলেছেন তা যেন তিনি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেন তার জন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান যাচ্ঞা করলেন। এখান থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা এই যে, তিনি আমাদের যেজন্য নিয়োগ করেছেন তা যেন আমরা সুসম্পন্ন করি এবং ঈশ্বর আমাদের যে মহা আশীর্বাদ দান করেন তা পাওয়ার জন্য আমাদের সারা জীবনভর তাঁর ইচ্ছা পালন করি ও তাঁর অনুসন্ধান করি। সেইজন্য আমাদের দরকার “ঊর্ধস্থিত জ্ঞান বা প্রজ্ঞা” (যাকোব ৩:১৭ পদ), যেন আমরা তাঁর ইচ্ছা বা আকাঙ্খা উপলব্ধি করতে পারি যেভাবে আমরা তাঁর বিষয়ক উপলব্ধি ও চূড়ান্ত বা পরম জ্ঞানের অন্বেষণ করে থাকি যা আমাদেরকে আমাদের কাজে ও আচার-আচরণে খ্রীষ্টের মতো হতে প্রভাবিত করে থাকে (যাকোব ৩:১৩ পদ)।
English
২বংশাবলি পুস্তক