প্রশ্ন
আপনি কি হোশেয় পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? হোশেয় পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?
উত্তর
লেখকঃ হোশেয় ১:১ পদ অনুসারে এটি প্রমাণিত যে, ভাববাদী হোশেয় হলেন এই পুস্তকটির লেখক। এটি হলো পৃথিবীস্থ ঈশ্বরের সমগ্র মানবসন্তাদের জন্য তার ভাববাণীমূলক বাণী। হোশেয় ভাববাদীর বলা সমস্ত ভাববাণী তার জীবনের জীবনের শেষার্ধে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
লেখার সময়কালঃ বাবিলে যিহূদীদের নির্বাসনকালীন সময়ে যিহিষ্কেল পুস্তকটি সম্ভবতঃ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৯৩-৫৬৫ অব্দের মধ্যে লেখা হয়েছে।
লেখার উদ্দেশ্যঃ হোশেয় ইস্রায়েলীয় লোকজন সহ আমাদেরকে পুনরায় এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে এই পুস্তকটি লিখেছিলেন যে, আমাদের ঈশ্বর হলেন প্রেমময় ঈশ্বর, চুক্তিকৃত লোকদের প্রতি যাঁর বিশ্বস্ততা অটল বা অবিচল। ইস্রায়েল জাতির মিথ্যা দেবতাদের প্রতি বার বার ফিরে যাওয়া সত্ত্বেও অবিশ্বস্ত স্ত্রীলোকের জন্য স্বামীর দীর্ঘকাল যাবৎ কষ্টভোগ করতে হলেও তাকে তিনি ভালবেসেছেন। হোশেয় এই বার্তা সেই সব লোকদের জন্য একটি সতর্কীকরণ বিষয় যারা ঈশ্বরের ভালবাসার প্রতি তাদের পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করে। রূপকার্থে ব্যবহৃত হোশেয় ও গোমরের বিবাহের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল জাতির অনৈথিক কার্যকলাপের পরও তাদের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা এবং পরবর্তীতে পাপ, বিচার ও ক্ষমার কথা উপমার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান পদসূহঃ হোশেয় ১:২ পদ, “সদাপ্রভু যখন প্রথমে হোশেয় দ্বারা কথা বলেন, তখন সদাপ্রভু হোশেয়কে কহিলেন, তুমি যাও, ব্যবভচারের স্ত্রীকে ও ব্যভিচারের সন্তানদিগকে গ্রহণ কর, কেননা এই দেশ সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে নিবৃত্ত হওয়ায় ভয়ানক ব্যভিচার করিতেছে।”
হোশয় ২:২৩ পদ, “আমি আপনার জন্য তাহাকে দেশে রোপণ করিব, ও যে ‘অনুকম্পিতা নয়,’ তাহাকে অনুকম্পা করিব, এবং যে ‘আমার প্রজা নয়,’ তাহাকে বলিব, তুমি আমার প্রজা, এবং সে বলিবে, তুমি আমার ঈশ্বর।”
হোশেয় ৬:৬ পদ, “কারণ আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়; এবং হোম অপেক্ষা ঈশ্বর-বিষয়ক-জ্ঞান [চাই]।”
হোশেয় ১৪:২-৪ পদ, “তোমরা বাক্য সঙ্গে লইয়া সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; তাঁহাকে বল, সমুদয় অপরাধ হরণ কর; যাহা উত্তম, তাহা গ্রহণ কর; তাহাতে আমরা আপন আপন ওষ্ঠাধর বৃষরূপে দিয়া বলিদান করিব। অশূর আমাদের পরিত্রাণ করিবে না, আমরা অশ্বে আরোহণ করিব না, এবং আপনাদের হস্তকৃত বস্তুকে আর কখনও বলিব না, ‘আমাদের ঈশ্বর।’ কেননা তোমারই নিকটে পিতৃহীন লোকেরা করুণা পায়। আমি তাহাদের বিপথগমনের প্রতীকার করিব, আমি স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে প্রেম করিব; কেননা আমার ক্রোধ তাহা হইতে ফিরিয়া গিয়াছে।”
সারসংক্ষপঃ হোশেয় পুস্তকটিকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায় : (১) হোশেয় ১:১-৩:৫ পদে প্রতিমা পূজা করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি ইস্রায়েল জাতির অবিশ্বস্ততার বিষয়টি রূপকার্থে একজন ব্যভিচারী স্ত্রীলোক ও একজন বিশ্বস্ত স্বামীর মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং (২) হোশেয় ৩:৬-১৪:৯ পদে ইস্রায়েল জাতি কর্তৃক প্রতিমাপূজা ও সেটিকে পুনঃস্থাপন করার জন্য ইস্রায়েল জাতি বিশেষ করে শমরীয়দের প্রতি শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
এই পুস্তকটির প্রথম ভাগে তিনটি কবিতা রয়েছে যেগুলোতে ঈশ্বরের সন্তানেরা কিভাবে প্রতিমাপূজা থেকে আবার ফিরে এসেছিল তার উল্লেখ রয়েছে। ঈশ্বর হোশেয়কে নির্দেশ দেন যেন তিনি গোমরকে বিয়ে করেন, কিন্তু সেই স্ত্রী তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়ে সে তার প্রেমিকদের কাছে ফিরে যায়। এই প্রতীকি বিষয়টি হোশেয় পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে হোশেয় বর্ণনা করেছেন যে, ইস্রায়েলীয় লোকেরা তাদের বিবাহিত স্ত্রীদের রেখে কিভাবে পতিতাদের কাছে ফিরে যায়। পুস্তকটির দ্বিতীয় ভাগে যা রয়েছে তা হলো- ইস্রায়েল জাতিকে ভীতি প্রদর্শন বা অভিশাপ প্রদান, কিন্তু তা অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা ও তাঁর মহানুগ্রহকে অনুসরণ করে।
হোশয় পুস্তকটি হলো মূলতঃ ঈশ্বরের সন্তানদের প্রতি তাঁর নিরন্তর ভালবাসাপূর্ণ একটি ভাববাণীমূলক পুস্তক। একেবারে সৃষ্টির শুরু থেকেই ঈশ্বরের প্রতি অকৃতজ্ঞ ও অযোগ্য মানবজাতি তাঁর ভালবাসা, অনুগ্রহ ও করুণা লাভ করে আসছে যারা এখনও পর্যন্ত তাদের সেই সব মন্দতা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে সক্ষম হচ্ছে না।
হোশেয় পুস্তকের শেষাংশ এটি দেখায় যে, ঈশ্বরের সন্তানেরা যখন তাদের খারাপ কাজ করা থেকে তাঁর কাছে ফিরে আসে ও অনুতপ্ত হয় তখন ঈশ্বরের ভালবাসা কিভাবে তাদেরকে আবার পুনঃস্থাপন করে। হোশেয়ের ভাববাণীমূলক বাণীগুলোর মধ্যে ইস্রায়েল জাতির উদ্ধারকর্তা যে আগামী ৭০০ বছরের মধ্যে আসছেন সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। হোশেয় ভাববাদী প্রায়ই নতুন নিয়ম থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করেছেন।
পূর্বাভাসঃ হোশেয় ২:২৩ পদে খুবই চমৎকারভাবে পরজাতীয় (যিহূদী নয়) লোকদেরকে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে ঈশ্বর হতে আগত ভবিষ্যদ্বাণীটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেটি আবার রোমীয় ৯:২৫ ও ১পিতর ২:১০ পদে উল্লেখ করা হয়েছে। পরজাতীয় লোকেরা প্রকৃতপক্ষে “ঈশ্বরের মনোনীত লোক” নয়, কিন্তু তিনি তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মধ্য দিয়ে যীশু খ্রীষ্টকে পাঠালেন যেন তাঁকে বিশ্বাস করে আমরা তাঁর মনোনীত লোকদের একজন হয়ে উঠতে পারি (রোমীয় ১১:১১-১৮ পদ)। মন্ডলী সম্পর্কে এটি একটি বিস্ময়কর সত্য, যেটিকে “নিগূঢ়তত্ত্ব” বলে অভিহিত করা হচ্ছে, কারণ খ্রীষ্ট আসার পূর্বে একমাত্র যিহূদী লোকেরাই ঈশ্বরের মনোনীত লোক হিসেবে বিবেচিত হতো। আর খ্রীষ্ট যখন আসলেন, তখন যিহূদী লোকেরা সাময়িকভাবে অন্ধ বা মূর্খ হয়ে রইলো “যে পর্যন্ত পরজাতীয়দের পূর্ণ সংখ্যা প্রবেশ না করে” (রোমীয় ১১:২৫ পদ)।
বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ হোশেয় পুস্তকটি আমাদেরকে তাঁর লোকদের প্রতি ঈশ্বরের শর্তহীন ভালবাসার বিষয়ে আশ্বস্ত করে। কিন্তু সেই সাথে সাথে এটিও দেখায় যে, ঈশ্বর কিভাবে তাঁর সন্তানদের কার্যকলাপের দ্বারা অসম্মানিত হন ও সেজন্য রাগান্বিতও হন। যে সন্তান তার বাবার কাছ থেকে অপরিসীম ভালবাস, দয়া ও অনুগ্রহ পেয়েছে, সে কিভাবে তার বাবাকে এতটা অসম্মান করতে পারে? যদিও আমরা এমনটি শত শত বছর যাবৎ করে আসছি। আমরা যদি ইস্রায়েলীয় লোকেরা যেভাবে ঈশ্বরের প্রতি তাদের পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন করেছিল সে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখি, তাহলে আমাদের জন্য এখন যে বিষয়টি ভাবা দরকার তা হলো, আমরাও যেন ঐ ইস্রায়েলীয় লোকদের মতো একই ঘটনা প্রতিফলিত না করি।
আমরা যদি কেবলমাত্র ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের জন্য যা যা করেছেন সেই সব বিষয়গুলোর কথা স্মরণ করি তাহলে আমরা যিনি আমাদেরকে অনন্ত নরকে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে গৌরবময় অনন্ত জীবন দিতে পারেন তাঁকে প্রত্যাখ্যান করার মতো বিষয়টি এড়াতে সক্ষম হব। যিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাঁকে সম্মান করার বিষয়টি শিক্ষালাভ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হোশেয় ভাববাদী আমাদেরকে এটি দেখিয়েছেন যে, যখন আমরা কোন ভুল করি, তখন যদি আমরা দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে সে বিষয়ে অনুতপ্ত হই, তাহলে ঈশ্বর আবার আমাদের প্রতি তাঁর অনন্ত-অসীম বা শেষ না হওয়া ভালবাসা প্রকাশ করে থাকেন (১যোহন ১:৯ পদ)।
English
আপনি কি হোশেয় পুস্তকটির সারসংক্ষেপ করতে পারেন? হোশেয় পুস্তকের সমস্ত বিষয় কি সম্পর্কে লেখা হয়েছে?