প্রশ্ন
ইয়োব পুস্তক
উত্তর
লেখকঃ ইয়োব পুস্তকে সুনির্দিষ্টভাবে পুস্তক লেখকের নাম উল্লেখ করা নেই। তবে খুব সম্ভবত ইয়োব, ইলীহূ, মোশি এবং শলোমন এদের মধ্যে কেউ একজন এই পুস্তকটি লিখেছেন বলে ধারণা করা হয়।
লেখার সময়কালঃ ইয়োব পুস্তকটি লেখার সময়কাল নির্ভর করে মূলত ইয়োব পুস্তকটি যিনি লিখেছেন তার সময়কালের উপর। যদি পুস্তকটি মোশি লিখে থাকেন, তবে পুস্তকটি লেখার সময়কাল হবে খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ১৪৪০ বছর আগে। যদি শলোমন পুস্তকটি লিখে থাকেন, তবে তাঁর লেখার সময়কাল হবে ৯৫০ খ্রীপূর্বাব্দ। যেহেতু আমরা লেখক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাই না, তাই পুস্তকটি লেখার সঠিক সময়কালও জানা যায় না।
লেখার উদ্দেশ্যঃ ইয়োব পুস্তকটি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বুঝতে আমাদেরকে সাহায্য করে-
ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া শয়তান কখনই আমারদের জীবনে অর্থনৈতিক ও শারীরিক যাতনা বা কষ্ট নিয়ে আসতে পারে না। শয়তান কী করতে পারে আর কী করতে পারে না- এই ক্ষমতার উপরেও রয়েছে ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা। পৃথিবীতে সমস্ত কষ্ট ও দুঃখ দুদর্শার কারণ বুঝতে পারা মানুষের পক্ষে সম্ভব না। দুষ্টেরা তাদের যোগ্য শাস্তি পাবে। আমাদের জীবনের দুঃখ-কষ্টের জন্য সব সময় আমরা আমাদের জীবন যাপনের ধারাকে দোষ দিতে পারি না। আমদের জীবনকে আরও পরিশুদ্ধ ও আমাদের আত্মিকতা আরও শক্তিশালী করতে আমাদের জীবনে অনেক সময় দুঃখ-কষ্ট, যাতনা নেমে আসে। ঈশ্বরই সর্বক্ষমতার অধিকারী, তিনি চান যেন সর্ব অবস্থায় আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁর প্রশংসা করি।
প্রধান পদসমূহঃ ইয়োব ১:১ পদ- “ঊষ দেশে ইয়োব নামে এক ব্যক্তি ছিলেন; তিনি সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বর ভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী ছিলেন।”
ইয়োব ১:২১ পদ- “আর কহিলেন, আমি মাতার গর্ভ হইতে উলঙ্গ আসিয়াছি, আর উলঙ্গ সেই স্থানে ফিরিয়া যাইব; সদাপ্রভু দিয়াছিলেন, সদাপ্রভুই লইয়াছেন; সদাপ্রভুর নাম ধন্য হউক।”
ইয়োব ৩৮: ১-২ পদ- “পরে সদাপ্রভু ঘূর্ণবায়ুর মধ্য হইতে ইয়োবকে উত্তর দিয়া কহিলেন, এ কে, যে জ্ঞানরহিত কথা দ্বারা মন্ত্রণাকে তিমিরাবৃত করে?”
ইয়োব ৪২: ৫-৬ পদ- “এই নিমিত্ত আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি, ধুলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।”
সারসংক্ষেপঃ ইয়োব পুস্তকটি এমন একটি ঘটনা দিয়ে শুরু হয়েছে যে ঘটনার দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে যে, শয়তান ঈশ্বরের সামনে ইয়োবকে অভিযুক্ত করার জন্য উপস্থিত হয়েছে। শয়তান দাবি করে যে, ইয়োব ঈশ্বরের একজন বিশ্বস্ত সেবক, কারণ ঈশ্বর সব সময় তাঁকে সুরক্ষা দেন এবং ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের বিশ্বাস ও বাধ্যতা পরীক্ষা করবার জন্য অনুমতি চান। ঈশ্বর শয়তানকে একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত ইয়োবকে পরীক্ষা করার অনুমতি দেন। কেন ধার্মিককে কষ্ট পেতে হবে? ইয়োব তাঁর পরিবার, ধন-সম্পদ ও স্বাস্থ্য হারিয়ে ফেলার পর এই ধরনের প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনে চলে আসে। ইয়োবের তিন বন্ধু ইলীফস, বিলদদ ও সোফর এসে ইয়োবকে সান্ত্বনা দিল এবং ইয়োবের জীবনের এই নিদারুণ কষ্টের বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেছিল। তারা বলেছিল যে, তার জীবনের এই মর্মান্তিক কষ্ট তারই পাপের ফল। তথাপিও ইয়োব এই কষ্টের মাঝে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকলেন এবং দাবি করলেন যে, তাঁর জীবনের এই দশা তাঁর কোন পাপের ফল না। চতুর্থ বন্ধু, ইলীহূ এসে বললেন যে, ইয়োব যেন ঈশ্বরের কাছে নম্র থাকে এবং তার জীবনে যে পরীক্ষা এসেছে, এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেন সে তার জীবনকে আরও পরিশুদ্ধ করতে পারে। শেষ পর্যন্ত ইয়োব নিজেই তার এই দুর্দশার কারণ ঈশ্বরের কাছে জানতে চাইলেন, এবং ঈশ্বরের সর্বময় ক্ষমতার ব্যাপারে এবং ঈশ্বরের উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখার ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ করলেন। এভাবে ইয়োব তার সুস্বাস্থ্য, সুখ, সমৃদ্ধি আগের তুলনায় আরও বেশি করে ফিরে পেয়েছিলেন।
পূর্বাভাসঃ ইয়োব যখন তার এই দুর্দশার কী কারণ হতে পারে তা নিয়ে ভাবছিলেন, তখন তিনটি প্রশ্ন তাঁর মনে আসল; যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর একমাত্র প্রভু যীশুর মধ্যেই বিদ্যমান। এই তিনটি প্রশ্ন রয়েছে ইয়োব ১৪ অধ্যায়ে। একই অধ্যায়ের ৪ পদে তিনি এভাবে প্রথম প্রশ্ন করেন, “অশুচি হইতে শুচির উৎপত্তি কে করিতে পারে? একজনও পারে না।” ইয়োবের প্রশ্নটা এমন একটা হৃদয় থেকে আসে যে, এ ধরনের হৃদয় সম্ভবত ঈশ্বরকে খুশি করতে পারে না বা তাঁর দৃষ্টিতে ন্যায়সঙ্গতও হতে পারে না। ঈশ্বর পবিত্র; আমরা নই। এজন্য পাপের কারণে ঈশ্বর ও মানুষের মাঝে একটা বিশাল দূরত্বের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইয়োবের এই কষ্টের প্রশ্নের উত্তর শুধুমাত্র যীশু খ্রীষ্টের মাঝেই পাওয়া যায়। প্রভু যীশু তাঁর ধার্মিকতার মূল্য দিয়ে আমাদের পাপের শাস্তি তিনি গ্রহণ করে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমাদেরকে গ্রহণযোগ্য করেছেন (ইব্রীয় ১০:১৪; কলসীয় ১:২১-২৩ পদ; ২করিন্থীয় ৫:১৭ পদ)।
ইয়োবের দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, “কিন্তু মনুষ্য মরিলে ক্ষয় পায়; মনুষ্য প্রাণত্যাগ করিয়া কোথায় থাকে?” (১০ পদ)। এই প্রশ্নটি করা হয়েছে মানুষের অনন্তজীবন ও জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে, যার উত্তর শুধুমাত্র প্রভু যীশুর মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। মনুষ্য প্রাণত্যাগ করিয়া কোথায় থাকে?- এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হচ্ছে শুধুমাত্র প্রভু যীশুকে গ্রহণ করলেই আমরা স্বর্গে অনন্তকালীন জীবন কাটাতে পারবো। কিন্তু প্রভু যীশুকে গ্রহণ না করলে অনন্ত নরকে আমাদেরকে পুড়তে হবে। যেখানে কান্নাকাটি হবে ও মানুষ যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষবে (মথি ২৫:৩০ পদ)।
এই অধ্যায়ের ১৪ পদে উল্লেখিত ইয়োবের তৃতীয় প্রশ্ন হলো, “মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে? ” এই প্রশ্নের উত্তরও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে রয়েছে। প্রভু যীশুকে উদ্ধারকর্তা হিসেবে গ্রহণ করলে অবশ্যই আমরা পুনর্জীবিত হবো। “আর এই ক্ষয়ণীয় যখন অক্ষয়তায় পরিহিত হইবে, এবং এই সত্য যখন অমরতা পরিহিত হইবে, তখন এই যে কথা লিখিত আছে, তাহা সফল হইবে, “মৃত্যু জয়ে কবলিত হইল। মৃত্যু, তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তোমার হুল কোথায়?” (১করিন্থীয় ১৫:৫৪-৫৫ পদ)।
বাস্তব প্রয়োগঃ ইয়োব পুস্তকটি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, বিভিন্ন ঘটনার পিছনে “মহাজাগতিক দ্বন্দ্ব চলছে যার সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই। আমরা অনেক সময় আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা কেন ঘটে তা বুঝতে পারি না এবং না বুঝেই আমরা ঈশ্বরের ভালোবাসার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করি; তাঁকে অবিশ্বাস করি। ইয়োব পুস্তক আমাদেরকে সমস্ত পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখার জন্য শিক্ষা দেয়। যখন আমাদের জীবনের ঘটনাগুলো কেন ঘটছে তা বুঝতে না পারার সময়েও যে শুধুমাত্র ঈশ্বরের উপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখব তা নয়; বরং আমরা কোন কারণ খুঁজে না পেলেও তাঁর উপর পরিপূর্ণ আস্থা কোনভাবেই হারাবো না। গীত রচয়িতা বলেছেন যে, “তিনিই ঈশ্বর, তাঁহার পথ সিদ্ধ” (গীতসংহিতা ১৮:৩০ পদ)। তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি যা-ই করেন- তিনি আমাদের জীবনে যেটাই ঘটবার অনুমতি দেন- সবই সঠিক ও ন্যায্য। এ বিষয়টা হয়তোবা আমাদের কাছে সম্ভব বলে মনে হয় না, কিন্তু আমাদের হৃদয় আর ঈশ্বরের হৃদয় এক না। এটা সত্য যে, আমরা ঈশ্বরের হৃদয়কে একেবারে পুরোপুরি বুঝতে পারার আশাও করতে পারি না, কারণ তিনি তাঁর বাক্যে বলেছেন, “আমার সংকল্প সকল ও তোমাদের সংকল্প সকল এক নয়, এবং তোমাদের পথ সকল ও আমার পথ সকল এক নয়। কারণ ভূতল হইতে আকাশমন্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সংকল্প হইতে আমার সংকল্প তত উচ্চ” (যিশাইয় ৫৫:৮-৯ পদ)। মোটকথা, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঈশ্বরের বাধ্য থাকা, তাঁর উপর ভরসা রাখা এবং আমরা কোন কারণ বুঝতে না পারলেও তাঁর কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করা।
English
ইয়োব পুস্তক