প্রশ্ন
ঈশ্বর কি আজও অলৌকিক বা পরাক্রম কাজ করেন?
উত্তর
পৃথিবীতে এমন অনেক লোক আছেন যারা প্রত্যাশা করেন যে, ঈশ্বর নিজেকে তাদের কাছে "প্রমাণ" করার জন্য কোন না কোন অলৌকিক কাজ করবেন। বিষয়টি এমন, "যদি ঈশ্বর কোন আশ্চর্য্ কাজ করেন, কিংবা কোন চিহ্নকা্র্য্ করেন, অথবা চমৎকার বা বিস্ময়কর কিছু করেন তাহলে আমি তাঁকে বিশ্বাস করন।" এমন ধারণা পবিত্র বাইবেলের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। ঈশ্বর যখন ইস্রায়েল জাতির জন্য চমৎকার ও পরাক্রম কাজ করেছিলেন তখন কি তারা ঈশ্বরকে মান্য করেছিল? না, বরং তারা ধারাবাহিকভাবে তাঁকে অমান্য করেছিল এবং এমন কি তাঁর সমস্ত অলৌকিক কাজ দেখা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করেছিল। এই একই লোকেরা ঈশ্বরকে আবার লোহিত সাগর দু'ভাগ করতে দেখেও তাঁর প্রতি সন্দেহ পোষণ করেছিল যে, তিনি আদৌ তাদের প্রতিজ্ঞাত দেশ জয় করাতে পারবেন কিনা। লূক ১৬:১৯-৩১ পদের মধ্যে এই সত্যটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেখানে নরকে যাওয়া লোকটি অব্রাহামকে অনুরোধ করে বলছে যেন তিনি জগতে তার ভাইদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য লাসারকে সেখানে পাঠান। উত্তরে অব্রাহাম লোকটিকে বললেন, "তাহারা যদি মোশির ও ভাববাদিগণের কথা না শুনে, তবে মৃতগণের মধ্য হইতে কেহ উঠিলেও তাহারা মানিবে না।।"
প্রভু যীশু অনেক আশ্চর্য্ কাজ করলেও অধিকাংশ লোক কিন্তু তাঁকে বিশ্বাস করেনি। পূর্বের মত আজও যদি ঈশ্বর অলৌকিক কাজ করেন তবুও তার ফল ঐ আগের মতই হবে। তাঁর এই অলৌকিক কাজ দেখে হয়তো বা লোকেরা অল্প সময়ের জন্য আশ্চর্য্ হবে এবং তাঁতে বিশ্বাস স্থাপন করবে। কিন্তু পরবর্তীকালে ভয়ংকর কিছু ঘটলে মুহূর্তেই তাদের বিশ্বাস হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। আশ্চর্য্ বা অলৌকিক কাজ দেখে যে বিশ্বাস উৎপন্ন হয় তা কোন পরিপক্ক বিশ্বাস নয়। ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে এই পৃথিবীতে এসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্চর্য্ কাজ সাধন করেছেন (রোমীয় ৫:৮ পদ) যেন আমরা পরিত্রাণ পাই (যোহন ৩:১৬ পদ)। আজও ঈশ্বর আশ্চর্য্ কাজ করে চলেছেন, এর মধ্যে অনেকগুলো মানুষের উপর কোনরূপ রেখাপাত না করে অলক্ষ্যে থেকে যায় কিংবা সেগুলো অস্বীকার করা হয়। যাহোক, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের জন্য যে পরিত্রাণ কাজ সাধিত হয়েছে তাতে বিশ্বাস করার জন্য আমাদের খুব বেশী আশ্চর্য্ বা পরাক্রম কাজের দরকার নেই।
অলৌকিক বা পরাক্রম কাজের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো যিনি এটি করেন তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করা। প্রেরিত ২:২২ পদে এই কথা ঘোষণা করা হয়েছে, "হে ইস্রায়েলীয়েরা, এই সকল কথা শুন। নাসরতীয় যীশু পরাক্রম-কার্য্, অদ্ভত লক্ষণ ও চিহ্নসমূহ দ্বারা তোমাদের নিকটে ঈশ্বর-কর্তৃক প্রমাণিত মনুষ্য; তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে ঐ সকল কার্য্ করিয়াছেন, যেমন তোমরা নিজেই জান।" শাস্ত্রের অন্যান্য পত্রগুলোতেও ঠিক একই কথা বলা হয়েছে, "প্রেরিতের চিহ্ন সকল তোমাদের মধ্যে সম্পূর্ণ ধৈর্য্ সহকারে, নানা চিহ্নকার্য্, অদ্ভত লক্ষণ ও পরাক্রম-কার্য্ দ্বারা সম্পন্ন হইয়াছে" (২করিন্থীয় ১২:১২ পদ)। পবিত্র শাস্ত্রে এবং সেই সঙ্গে প্রেরিতদের চিঠিগুলিতে যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কিত যে প্রকৃত সত্যটি লিপিবদ্ধ রয়েছে তা আমরা বাইবেল অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে জানতে পারি। তাই শাস্ত্রানুসারে, যীশু খ্রীষ্ট এবং তাঁর শিষ্যরা হলেন আমাদের বিশ্বাসের কোণের প্রধান প্রস্তর এবং ভিত্তিমূল (ইফিষীয় ২:২০ পদ)। আর যেহেতু শাস্ত্রের প্রতিটি কথা সর্বতোভাবে সত্য ও প্রমাণিত সেহেতু যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস করার জন্য আমাদের আর কোন আশ্চর্য্ বা পরাক্রম কাজের দরকার নেই। তবে হ্যাঁ, ঈশ্বর আজও তাঁর আশ্চর্য্ বা অলৌকিক কাজ করে চলেছেন, কিন্তু তিনি পূর্বে যেমনটি করেছিলেন, সেগুলো যে আজও ঘটাবেন তেমন প্রত্যাশা করা উচিত নয়।
English
ঈশ্বর কি আজও অলৌকিক বা পরাক্রম কাজ করেন?