settings icon
share icon
প্রশ্ন

মার্কলিখিত সুসমাচার

উত্তর


লেখকঃ যদিও মার্কের লেখা সুসমাচারটি এর লেখকের কথা প্রকাশ করে না, তবুও প্রাথমিক বা আদি মন্ডলীর নেতৃবৃন্দ সর্বসম্মতিক্রমে এই সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, মার্কই হলেন এই পুস্তকের লেখক। তিনি প্রেরিত পিতরের একজন সহকারী, এবং প্রত্যক্ষভাবে তিনি তার একজন আত্মিক পুত্র ছিলেন (১পিতর ৫:১৩ পদ)। পিতরের কাছ থেকেই তিনি প্রভুর যাবতীয় ঘটনাবলী ও তাঁর শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত প্রাথমিক তথ্যাবলী গ্রহণ করেছিলেন এবং সেই সমস্ত তথ্যাবলী তিনি লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেছিলেন।

এটি সকলের স্বীকৃত বিষয় যে, মার্কই হলেন নতুন নিয়মের যোহন মার্ক (প্রেরিত ১২:১২ পদ)। তার মা যিরূশালেম মন্ডলীর একজন সম্পদশালী ও বিশিষ্ট খ্রীষ্টবিশ্বাসী, এবং খুব সম্ভব সভা তার গৃহেই অনুষ্ঠিত হতো। মার্ক প্রেরিত পৌল ও বার্ণবাসের প্রথম প্রচার যাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন, কিন্তু ঐ দুই ব্যক্তির মধ্যে তিক্ত মতভেদের কারণে তিনি তাদের দ্বিতীয় প্রচার যাত্রার সঙ্গী হন নি (প্রেরিত ১৫:৩৭-৩৮ পদ)। যাহোক, প্রেরিত পৌলের জীবনের শেষ সময়ে তার সঙ্গে থাকবার জন্য মার্ককে ডাকা হয়েছিল (২তীমথিয় ৪:১১ পদ)।

লেখার সময়কালঃ মার্কলিখিত সুসমাচার সম্ভবতঃ নতুন নিয়মের পুস্তকগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম লেখা হয়েছিল, যার সময়কাল ছিল সম্ভবতঃ ৫৭-৫৯ খ্রীষ্টাব্দ।

লেখার উদ্দেশ্যঃ যেখানে মথিলিখিত সুসমাচারটি প্রাথমিকভাবে মথির স্বগোত্রীয় যিহূদীদের নিয়ে লেখা হয়েছে, সেখানে মার্কলিখিত সুসমাচারটিতে রোমীয় বিশ্বাসীদের, বিশেষভাবে পরজাতীয়দের প্রতি বেশী আলোকপাত করার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। এখানে মার্ক খ্রীষ্টিয়ানদের একজন পালক হিসেবে এটি লিখেছেন যিনি পূর্বেই এই সুখবর সম্বন্ধে শুনেছিলেন ও তাতে বিশ্বাসও করেছিলেন (রোমীয় ১:৮ পদ)। তিনি চেয়েছিলেন যে, চরম নির্যাতনের সময় তাদেরকে শক্তিশালী করতে এবং তাঁর শিষ্য হবার অর্থ কি তা শিক্ষা দিতে প্রভুর একজন দাস বা সেবক ও বিশ্বের ত্রাণকর্তা হিসেবে তাদের কাছে যীশু খ্রীষ্টের একটি জীবনীবিষয়ক গল্প থাকবে।

মূল বা প্রধান পদসমূহঃ মার্ক ১:১১ পদ, “আর স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।’”

মার্ক ১:১৭ পদ, “যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস, আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব।”

মার্ক ১০:১৪-১৫ পদ, “তিনি [যীশু] তাহাদিগকে কহিলেন, ‘শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। আমি তোমাদিগকে সত্য কলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পারিবে না।’”

মার্ক ১০:৪৫ পদ, “কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।”

মার্ক ১২:৩০-৩১ পদ, “আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে। দ্বিতীয়টি এই, তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।”

মার্ক ১৬:৬ পদ, “তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, বিস্ময়াপন্ন হইও না, তোমরা নাসরতীয় যীশুর অন্বেষণ করিতেছ, যিনি ক্রুশে হত হইয়াছেন; তিনি উঠিয়াছেন, এখানে নাই; দেখ, এই স্থানে তাঁহাকে রাখা গিয়াছিল।”

মার্ক ১৬:১৫ পদ, “আর তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর।”

সারসংক্ষেপঃ এই সুসমাচারটি স্বতন্ত্র বা আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, কারণ এটি যীশুর শিক্ষার তুলনায় তাঁর কাজের উপর বেশী জোর বা গুরুত্ব প্রদান করে। এটি সহজ সরলভাবে লেখা হয়েছে, এবং খুব দ্রুতই খ্রীষ্টের জীবনের একটি ঘটনা থেকে অন্য একটি ঘটনায় উপনীত হয়েছে। মথিলিখিত সুসমাচারটি যেভাবে বংশতালিকা দিয়ে শুরু হয়েছে, এটি যেভাবে শুরু করা হয়নি, কারণ পরজাতীয়রা তাঁর অর্থাৎ যীশুর বংশতালিকার প্রতি আগ্রহী নাও হতে পারে। বাপ্তিস্ম গ্রহণের মধ্য দিয়ে যীশুর পরিচয় দানের পর যীশু প্রকাশ্যে গালীলে তাঁর পরিচর্যা কাজ শুরু করেন এবং তাঁর বারো জন শিষ্যের প্রথম চারজনকে আহ্বান করেন। এগুলোর সবই যীশুর জীবনী, তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থান সংক্রান্ত ঘটনাবলীর মধ্যে লিপিবদ্ধ আছে।

মার্কের এই বিবরণী শুধুমাত্র গল্পের সমগ্র নয়, কিন্তু এটি একটি বর্ণনামূলক বিবরণী যেখানে যীশুকে কেবলমাত্র যিহূদীদের জন্য নয়, কিন্তু সেই সাথে পরজাতীয়দের জন্যও মশীহ অর্থাৎ উদ্ধারকর্তা হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। একটি শক্তিশালী বা গতিশীল ধর্মবিশ্বাসের জায়গা পিতর কর্তৃক পরিচালিত শিষ্যদল তাঁর অর্থাৎ যীশুর প্রতি তাদের বিশ্বাসের কথা স্বীকার করেছিলেন (মার্ক ৮:২৯-৩০ পদ), এমন কি তারা তাঁর পুনরুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি যে মশীহ বা উদ্ধারকর্তা তা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

আমরা যদি গালীল, এর চারপাশের এলাকা এবং সেখনে থেকে যিহূদিয়ার দিকে তাঁর যাত্রার বিষয়টি লক্ষ্য করি তাহলে উপলব্ধি করতে পারি যে, তিনি কত দ্রুতই তার বিষয়গুলো প্রতিস্থাপিত করেছেন। তিনি অনেকের জীবন স্পর্শ করেছেন, কিন্তু তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছে এক অমোচনীয় চিহ্ন রেখে গেছেন। তাঁর রূপান্তরের সময় (মার্ক ৯:১-৯ পদ), তিনি যে আবার শক্তি ও পরাক্রমের সহিত ফিরে আসবেন তার একটি নমুনা ঐ শিষ্যদের মধ্যকার তিন জনকে দেখিয়েছিলেন, আর তিনি আসলে কে তা আবার তাদের কাছে প্রকাশ করলেন।

যাহোক, যিরূশালেমে তাঁর শেষ যাত্রার দিনগুলোতে আমরা তাদেরকে আবারও হতবুদ্ধি, ভীত ও সন্দেহপ্রবণ হতে দেখি। যীশুকে যখন বন্দি করা হয় তখন তাঁর শিষ্যরা সকলে তাঁকে একাকী রেখে পালিয়ে গেল। জনতা কর্তৃক যীশুর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ চলাকালীন সময়ে তিনি অত্যন্ত সাহসের সহিত ঘোষণা করলেন যে, তিনিই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের আশীর্বাদের একমাত্র পুত্র, আর তাই তিনি আবার বিজয়ীবেশে শেষ বিচারে ফিরে আসবেন (মার্ক ১৪:৬১-৬২ পদ)। তাঁর চরম পরিণতিকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলো অর্থাৎ তাঁর ক্রুশারোপণ, মৃত্যু, সমাধি ও পুনরুত্থানের ঘটনাবলীর সাক্ষী কিন্তু তাঁর অধিকাংশ শিষ্যই ছিল না। কিন্তু কতিপয় বিশ্বাসী স্ত্রীলোক তাঁর কষ্টভোগের সাক্ষী হয়েছিলেন। বিশ্রাম দিনের পর, সপ্তাহের প্রথম দিনের খুব সকালে তারা তাঁর দেহে সুগন্ধি মাখানোর জন্য কবরের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। যখন তারা দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরানো রয়েছে, তখন তারা কবরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। তারা যা দেখলেন যে, যীশুর দেহ সেখানে নেই, কিন্তু সাদা পোশাক পরিহিত একজন স্বর্গদূত সেখানে রয়েছেন। যে আনন্দের বার্তা বা বাণী তারা সেদিন পেয়েছিলেন তা হলো- “তিনি উঠেছেন!” স্ত্রীলোকগুলো যেহেতু তাঁর পুনরুত্থানের সুখবর চারিদিকে ছড়িয়ে দিলেন, তাই তারাই হলেন প্রথম সুখবর প্রচারক। আর তখন থেকেই এই সুখবর আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বত্র শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রচারিত হয়ে আসছে।

যোগসূত্রঃ যেহেতু মার্কের অভিষ্ট শ্রোতামন্ডলী ছিল পরজাতীয়রা, তাই তিনি মথি সুসমাচারের মতো যেখানে প্রথমেই যিহূদীদের বিষয়ে লেখা হয়েছে, পুরাতন নিয়মে উল্লেখিত সেই সব বিষয়গুলো থেকে উদ্ধৃতি দেন নি। তিনি যিহূদীদের সাথে যীশুর বংশক্রমিকতার বিষয়টি দিয়ে শুরু করেন নি, কিন্তু তিনি তাঁর বাপ্তিস্ম গ্রহণ, তাঁর প্রাথমিক পরিচর্যা কাজের বিষয় দিয়ে শুরু করেছেন। তথাপি মার্ক পুরাতন নিয়মে উল্লেখিত একজন বার্তাবাহক- বাপ্তাইজক যোহন- যিনি লোকদেরকে “প্রভুর পথ প্রস্তুত করা’র বিষয়ে উদ্ধুতি ব্যবহার করেছেন (মার্ক ১:৩; যিশাইয় ৪০:৩ পদ) যেভাবে লোকেরা সেই উদ্ধারকর্তা মশীহের আগমনের প্রত্যাশায় আছে।

যীশু মার্কলিখিত সুসমাচারে উল্লেখিত কতিপয় অনুচ্ছেদে পুরাতন নিয়মের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। মার্ক ৭:৬ পদে যীশু ফরীশীদের অনুযোগ করেছেন এই জন্য যে, তারা মুখে অতিমাত্রায় ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভক্তি ও আরাধনা প্রদর্শন করে যেখানে তাদের অন্তর তাঁর কাছ থেকে অনেক দূরে থাকে এবং তারা তাদের নিজস্ব ভাববাদীদের কথা উল্লেখ করে, যিশাইয় তাদের এরূপ কঠিন হৃদয়ের জন্য দোষী করেছেন (যিশাইয় ২৯:১৩ পদ)। এছাড়াও যীশু পুরাতন নিয়মের অন্য একটি ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যেখানে তিনি শিষ্যদের বলছেন যে, তিনি যে রাতে বন্দি হবেন ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে তখন তার শিষ্যরা পালকবিহীন মেষপালের মতো এদিক ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে (মার্ক ১৪:২৭; সখরিয় ১৩:৭ পদ)। তিনি যখন যিরূশালেম মন্দির পরিস্কার করার সময় টাকা লেনদেনকারীদের মেজ উল্টিয়ে ফেলছিলেন তখন আবারও যিশাইয় পুস্তক (মার্ক ১১:১৫-১৭; যিশাইয় ৫৬:৭; যিরমিয় ৭:১১ পদ) এবং গীতসংহিতা পুস্তকের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেন যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তিনিই হলেন বিশ্বাস ও মন্ডলীর প্রধান প্রস্তর (মার্ক ১২:১০-১১; গীতসংহিতা ১১৮:২২-২৩ পদ)।

বাস্তব বা কার্যকরী প্রয়োগঃ মার্ক যীশুকে একজন দুঃখভোগকারী ঈশ্বরের দাস হিসেবে উপস্থাপন করেছেন (মার্ক ১০:৪৫ পদ), আর তিনি এমন একজন যিনি আমাদের পরিচর্যা ও আমাদের জন্য আত্মোৎসর্গ করতে ও আমরাও যেন তাঁর মতো একই কাজ করি সে বিষয়ে উৎসাহিত করতে এসেছেন। তিনি যা যা করেছেন আমরা যেন সেই একই ধরনের মানবতার জন্য মহৎ কিছু করার ও অন্যদের সেবা করার ব্যাপারে অনুরক্ত হবার জন্য এক একজন পরিচর্যাকারী হয়ে উঠি। যীশু আমাদের উৎসাহিত করেন যেন আমরা এটি স্মরণে রাখি যে, যদি আমরা ঈশ্বরের রাজ্যে মহান হতে চাই, তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই সকলের দাস বা পরিচারক হতে হবে (মার্ক ১০:৪৪ পদ)। আত্মোৎসর্গকে অবশ্যই আমাদের স্বীকৃতিদান কিংবা পুরস্কার প্রাপ্তিকে ছাড়িয়ে যেতে হবে, ঠিক যেভাবে যীশু তাঁর নিজের জীবনকে হত মেষের ন্যায় স্বেচ্ছায় সমর্পণ করেছিলেন।

English



বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

মার্কলিখিত সুসমাচার
© Copyright Got Questions Ministries