প্রশ্ন
‘‘প্রভু যীশু কি প্রচলিত পুরাণ কাহিনীর কোন চরিত্র? তিনি কি পুরানো ধর্মগুলোতে উল্লিখিত পৌত্তলিক দেবতাদের কোন একজন?’’
উত্তর
অনেক লোকেরা নতুন নিয়মে লিখিত প্রভু যীশুর খ্রীষ্টের জীবনের সমস্ত ঘটনাগুলোর বিষয়ে এমন অভিযোগ করে যে, এ ঘটনাগুলো অরিসিস (Osiris), ডিও নিসাস (Dionysus), অ্যাডোনিস (Adonis) অ্যাটিস (Attis) ও মিথরাস (Mithras) ব্যক্তিদের নিয়ে প্রচলিত পুরাণ কাহিনীর মত একই কাহিনী। তারা দাবি করে যে, এই পুরাণ কাহিনীগুলো এবং নতুন নিয়মে লিখিত নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের কাহিনী একই ধরনের বিষয়। লেখক ড্যান ব্রাউন (Dan Brown ) তার “দি দা ভিনচি কোড” (The Da Vinci Code) বইতে মন্তব্য করে বলেছেন যে, খ্রীষ্টধর্মের কোন কিছুই আসল নয়।’’
‘সুসমাচারের লেখকেরা এসব পুরাণ কাহিনী থেকে গল্প ধার করে সুসমাচার লিখেছে’- তাদের এমন দাবি কতটা সত্য তা উদঘাটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজ হল : (১) এ ধরনের দাবির পেছনের ইতিহাস খুঁজে দেখা, (২) খ্রীষ্টের সঙ্গে তুলনা করা পৌত্তলিক ভ্রান্ত দেবতার আসল চরিত্র পরীক্ষা করে দেখা, (৩) এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা, যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে কিনা তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা, (৪) কেন নতুন নিয়মে লিখিত প্রভু যীশুর ব্যাপারে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ঘটনাগুলো একেবারে সত্য, তার দিকে ভালভাবে দৃষ্টি দেয়া।
এই সব দাবিতে বলা হয়েছে যে, প্রভু যীশু পুরাণ কাহিনীর কোন চরিত্র বা তাঁকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয়েছে; এ ধরনের দাবি ঊনবিংশ শতাব্দীর জার্মান মুক্তমনা ধর্মবেত্তাদের লেখায় প্রথমে দেখতে পাওয়া যায়। এসব ধর্মবেত্তারা বলেছিলেন যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট পুরাণ কাহিনীতে লেখা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠা মেসোপটেমিয়ার টামুজ (Tammuz), সিরিয়ার অ্যাডোনিস (Adonis) , এশিয়া মাইনরের অ্যাটিস (Attis) এবং মিশরের হোরাস (Horus) দেবতাদের মত একজন কাল্পনিক দেবতা ছাড়া বেশি কিছু নন। কিন্তু ঐ সময়কার বিজ্ঞ পন্ডিতেরা এসব ধর্মবেত্তাদের লেখা বইগুলোকে খুব গুরুত্ব দেননি। যে দাবিতে বলা হয়েছিল যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মেসোপটেমিয়ার টামুজের অনুলিপি; সেই দাবিটা ঐ সময়কার বিদ্বান ব্যক্তিরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন যে, তাদের এই দাবির কোন ভিত্তি নেই। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার ও সীমাহীর উৎস থেকে অনেক সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এ ধরনের ভ্রান্ত দাবির উত্থান দেখতে পাওয়া যায়।
এ দাবি আমাদেরকে পরবর্তী আরও তদন্তের দিকে নিয়ে যায়- পুরাণ কাহিনীর দেবতারা কি সত্যিই প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতিনিধিত্ব করে? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, (Zeitgeist) সিনেমায় মিশরীয় দেবতা হোরাসকে প্রভু যীশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে যে :
তার জন্ম হয়েছিল ২৫ ডিসেম্বর কুমারী আইসিস মেরীর (Isis Mary) গর্ভে ।
পূর্বদেশের তারা তার জন্মের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছিল।
তিনজন রাজা নতুন জন্ম নেওয়া উদ্ধারকর্তাকে সম্মান করতে এসেছিল।
১২ বছর বয়সে তিনি দারুনভাবে শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন।
৩০ বছর বয়সে তাকে বাপ্তিস্ম দেয়া হয়েছিল এবং তিনি কাজ শুরু করেছিলেন।
হোরাসের ১২ জন শিষ্য ছিল।
হোরাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল ।
তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল।
তিনি তিনদিন কবরে ছিলেন।
তিনদিন পর তিনি কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠেছিলেন।
যাই হোক, হোরাসকে নিয়ে প্রকৃত লেখা যখন আমরা উৎঘাটন করলাম, তখন আমরা যেসব তথ্য খুঁজে পেলাম সেগুলো হলো :
হোরাস “আইসিস” নামক নারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন; কিন্তু ইতিহাসের কোথাও আইসিস-কে “মেরী বা মরিয়ম” নাম ধরে ডাকা হয়নি। তাছাড়াও আমরা যাকে মেরী বলি তার আসল নাম মরিয়ম। “Mary” শব্দটি এমনকি গ্রীক শাস্ত্রেও উল্লেখ নেই ।
আইসিস কোন কুমারী মেয়ে ছিল না; সে ছিল আরিসিসের বিধবা স্ত্রী এবং তার গর্ভে আরিসিসের ঔরসে হোরাস জন্মেছিল।
হোরাস অক্টোবর/নভেম্বর মাসে (Khoiak) জম্মগ্রহণ করেছিল; ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে নয়। তাছাড়া পবিত্র বাইবেলে কোথাও উল্লেখ নেই যে, ২৫ ডিসেম্বর প্রভু যীশুর জন্ম হয়েছিল।
এমন কোন লিখিত প্রমাণ নেই যে, তিনি জন পন্ডিত হোরাসের জন্মের সময় দেখতে এসেছিল। তাছাড়া বাইবেলে উল্লেখ নেই যে, কতজন পন্ডিত ব্যক্তি যীশুর জন্মের সময় এসেছিল।
হোরাস কোনভাবেই উদ্ধারকর্তা হতে পারে না; সে কারও জন্য মৃত্যুবরণ করেনি।
হোরাসের ১২ বছর বয়সে শিক্ষক হবার কোন প্রমাণিক দলিল নেই।
হোরাসকে কখনও কোন বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়নি। হোরাসের ব্যাপারে বলা গল্পে দেখা যায় যে, তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ফেলে দেয়া হয়েছিল এবং তার মা আইসিস কুমির দেবতাকে অনুরোধ করেছিল, যেন তাকে জল থেকে তুলে আনে।
হোরাস কোন পরিচর্যা কাজের সাথে জড়িত ছিল না।
হোরাসের ১২ জন শিষ্য ছিল না। হোরাসের জীবনীতে দেখা যায় যে, হোরাসের চারজন উপদেবতা ছিল যারা তাকে অনুসরণ করত; তাছাড়াও তার ১৬ জন মানবভক্ত ছিল বলে আভাস পাওয়া যায় এবং অনির্দিষ্ট লোকদের উল্লেখ পাওয়া যায় যারা তার সাথে যুদ্ধে গিয়েছিল।
হোরাসের ব্যাপারে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি যে, সে কোন বন্ধুর দ্বারা প্রতারিত হয়েছে।
হোরাস ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যায় নি। হোরাসের বিভিন্নভাবে মৃত্যুর কথা উল্লেখ আছে, কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি যে, তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়েছে।
তাকে তিনদিন ধরে কবরে রাখা হয়েছে বলে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
হোরাস মৃত্যুকে জয় করে কবর থেকে উঠেনি। যে শরীর নিয়ে সে কবরে গিয়েছে, সে শরীর দিয়ে সে কবর থেকে উঠেছে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু কিছু কিছু লেখাতে এমন তথ্য পাওয়া যায় যে, হোরাস/আরিসিস আইসিসের মাধ্যমে জীবন ফিরে পেয়েছে এবং তারপর অন্ধকার রাজ্যের অধিপতি হয়েছে।
যখন প্রভু যীশু ও হোরাসের জীবন পাশাপাশি রেখে তুলনা করা হয়, তখন সামান্য মিল খুঁজে পেতেও কষ্ট হয়ে যায়। কিছু লোকেরা প্রভু যীশুকে মিথরাসের সঙ্গে তুলনা করে, যারা মনে করে যে, প্রভু যীশু পৌরাণিকক গল্পের একজন ব্যক্তি। হোরাসের মত মিথরাসের জীবনকে কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনার (কুমারীর গর্ভে জন্ম, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া, তৃতীয় দিবসে উঠা) আলোকে দেখলে আমরা প্রকৃত সত্য জানতে পারি। কিন্তু মিথরাসের ব্যাপারে পৌরাণিক কাহিনী যা বলে তা হলো :
মিথরাস পুরোদস্তুর পাথর থেকে জন্ম নিয়েছে। কোন মহিলার গর্ভে সে জন্মেনি।
সে প্রথমে সূর্যের সাথে এবং পরবর্তীতে সৃষ্টির প্রথম জীব হিসেবে আদিম ষাড়ের সাথে যুদ্ধ করেছিল। মিথরাস আদিম ষাড়কে হত্যা করেছিল এবং এভাবে দুনিয়াতে মানবজাতির আগমন ঘটেছিল।
মিথরাসের জন্ম উৎসব পালন করা হয়েছিল শীতকালের মকরক্রান্তি সময়কালীন ২৫ ডিসেম্বর।
মিথরাসের ব্যাপারে কোন বিখ্যাত শিক্ষক/গুরু হওয়ার উল্লেখ নেই ।
মিথরাসের ১২ জন শিষ্য ছিল বলে কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায় নি। কিন্তু তার মূর্তির চারিদিকে রাশিচক্রের ১২ টি চিহৃ থাকার কারণে অনেকেই মনে করেন তার ১২ জন শিষ্য ছিল।
মিথরাসের দৈহিকভাবে কোন পুনরুত্থান হয়নি। বরং মিথরাস যখন জগতে তার কাজ শেষ করেছিল, তখন তাকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় স্বর্গে তুলে নেয়া হয়েছিল। প্রথম দিকের খ্রীষ্টিয়ান লেখক টারটুলিয়ান মিথরাসের অনুসারী দ্বারা পুনরুত্থানের ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি করলেও, এ ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে নতুন নিয়ম লেখার সময়ের পরে; তাই যদি কোন তথ্য নকল করা হয়, তবে তা হয়েছে খ্রীষ্টের জীবন অনুকরণের মাধ্যমে মিথরাসের জীবন তুলে ধরার মধ্য দিয়ে।
আরও উদাহরণ দেয়া যায় কৃষ্ণ, অ্যাটিস, ডিওনিসাস এবং অন্যান্য পৌরানিক দেবতাদের জীবনী সম্পর্কে, কিন্তু সেগুলো ভালভাবে পর্যালোচনা করলেও অন্যান্য দেবতাদের মত একই ফলাফল পাওয়া যায়। পরিশেষে বলা যায় যে, বাইবেলে উল্লিখিত আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সবচেয়ে আলাদা এবং তাঁর জীবন অন্যান্যদের জীবন থেকে অনেক উন্নত ও অতুলনীয়। যীশু খ্রীষ্টের জীবনের সাথে মিল রেখে পৌরানিক কাহিনীর দেবতাদের জীবনের ভ্রান্ত মিলগুলো অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া হোরাস, মিথরাস ও অন্যান্য দেবতাদের কাহিনীর সময়কাল খ্রীষ্টের প্রকাশিত হবার আগে ধরা হলেও, খ্রীষ্টের আগমনের আগে ঐসব পুরাণ কাহিনীর তেমন কোন ঐতিহাসিক নথি-পত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। পৌরানিক কাহিনীগুলোর বেশিরভাগ লেখাগুলোর সময়কাল ধরা হয়েছে তৃতীয় বা চতুর্থ খ্রীষ্টাব্দ। সুতরাং আগের পৌত্তলিক ধর্মের ঘটনার সাথে খ্রীষ্টের আগমনের পরের ঘটনাগুলো একই বলে মনে করা আমাদের জন্য বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। বরং এটা বললে আরও যুক্তিসংগত হবে যে, যীশুর বিষয়ে খ্রীষ্টীয় শিক্ষা থেকে পৌরানিক কাহিনীগুলোর ঘটনা সাজানো হয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়ের পর আমরা প্রচলিত অন্য কোন ভ্রান্ত বিষয়গুলো একটু যাচাই করে দেখতে চাই: কেউ কেউ ভ্রান্ত চুক্তি দিয়ে বলে যে, খ্রীষ্টধর্ম অন্যান্য ভ্রান্ত/পৌত্তলিক ধর্ম থেকে ঘটনাগুলো নকল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের যে ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে তার মধ্যে দু’টি ভুল বা ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে আমরা আলোকপাত করতে চাই। এর মধ্যে একটা হলো মিথ্যা কোন কারণ দেখানোর ভ্রান্ত প্রচেষ্টা এবং দ্বিতীয়টি হলো শব্দের পরিভাষাগত ভ্রান্ত ধারনা।
একটা বিষয় বা ঘটনার আগে অন্য ঘটনা ঘটলে, অনেকেই এটা বলে থাকে যে, প্রথম ঘটনার ফলে দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ধরনের যুক্তি হলো ভ্রান্ত যুক্তি যা দিয়ে অসত্যকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিদিন সূর্য উঠার আগে মোরগ ডাকে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, মোরগের ডাকই আকাশে সূর্য উঠায়। একইভাবে পৃথিবীতে খ্রীষ্টীয় ইতিহাসের আগের কোন পৌরানিক দেবতার সংগে যদি যীশুর জীবনের কোন ঘটনা মিলে যায়, এর অর্থ এই নয় যে, ঐ ঘটনাগুলো সুসমাচার লেখকেরা অনুসরণ করে মিথ্যা যীশুকে আমাদের সামনে হাজির করেছে। এ ধরনের দাবি যদি সত্য বলে ধরা হয়, তবে এটাও বলা যাবে যে, টিভিতে দেখানো “স্টার ট্রাক”- এর ড্রামাটি মহাকাশে নাসা শাটল অবতরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল।
শব্দের পরিভাষাগত ভ্রান্ত ধারনা সৃষ্টি হয় যখন একটা বিষয়কে প্রমাণ করার জন্য সেটা আবার সংজ্ঞায়িত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, (জেইটজিস্ট) সিনেমায় বলা হয়েছে যে, হোরাস তার “কাজ শুরু করল”; কিন্তু এখানে কাজ শব্দটিকে ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরিচর্যা কাজের মত হোরাসের কোন পরিচর্যা কাজের দায়িত্বভার ছিল না। অনেকে আছেন যারা প্রভু যীশুর বাপ্তিস্ম ও মিথরাসের গল্পে উল্লেখিত বাপ্তিস্মের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পান; কিন্তু আসলে কি সেটা প্রভু যীশুর মত বাপ্তিস্ম ছিল? মিথরাসের অনুসারী পুরোহিতেরা তাদের নতুন কোন সদস্যকে দীক্ষা গ্রহণের জন্য একটা গর্তের মধ্যে দাঁড় করিয়ে তারপর গর্তের উপরে একটা ষাঁড়কে ঝুলিয়ে দিয়ে পেট কেটে ফেলতেন এবং তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত দিয়ে নতুন শিষ্যকে ভিজিয়ে দিয়ে দীক্ষা দান করতেন। এ ধরনের বাপ্তিস্মের সাথে খ্রীষ্টের বাপ্তিস্মের বা খ্রীষ্টিয়ানদের বাপ্তিস্মের কোন মিল নেই- খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের বাপ্তিস্মের সময় জলের নিচে ডুব দিতে হয় (যার অর্থ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছেন) এবং তারপর আবার জলের ভিতর থেকে বের হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয় (যার অর্থ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান)। কিন্তু যারা যীশুকে পুরাণ কাহিনীর কোন ব্যক্তির সাথে তুলনা করে, তারা এই বাপ্তিস্মের সাথে খ্রীষ্টিয়ানদের বাপ্তিস্মকে একই বিষয় হিসেবে দেখানোর জন্য চালাকি পন্থা অনুসরণ করে থাকে।
এভাবে আমরা নতুন নিয়মের ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাই। নতুন নিয়মের মত প্রাচীনকালের অন্য কোন কাজেরই ততবেশি ঐতিহাসিক সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় না। ঐ সময়কার অন্য যে কোন পান্ডুলিপির লেখকদের চাইতে নতুন নিয়মের সুপরিচিত লেখকদের সুস্পষ্ট পরিচয় এবং তাদের কতজন নতুন নিয়ম লিখেছেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। তাছাড়াও ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে, প্রভু যীশু যে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন- এই সাক্ষ্য বহন করার জন্য ঐ সাক্ষ্য বহনকারীদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে। অনেক মিথ্যাকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করার কারণে অনেকে প্রাণ দেয়। কিন্তু একজন লোক কোন ঘটনাকে মিথ্যা হিসেবে জেনে মিথ্যা ঘটনার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নেয় না। একবার এটা ভেবে দেখুন তো –সত্যকে অস্বীকার না করার জন্য পিতরকে যেমন ক্রুশে বিদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছিল; যদি এমন হয় যে, আপনি স্বজ্ঞানে একটা মিথ্যা কথা বলেছেন এবং সেই মিথ্যাকে অস্বীকার না করার জন্য আপনাকে ক্রশবিদ্ধ করার হুমকি দেয়া হয়, তবে আপনি কী করবেন, আপনি কি সেই মিথ্যাকে অস্বীকার করবেন না?
এছাড়াও ইতিহাস থেকে এটার প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পৌরানিক কাহিনী বা কোন ভ্রান্ত কাহিনী ইতিহাসের ঘটনায় ঢুকাতে দুই প্রজন্ম সময় পার হবার পর তা সম্ভব হয়। তার কারণ হলো, যত দিন চাক্ষুষ সাক্ষী পৃথিবীতে উপস্থিত থাকবে, ততদিন ধরে যে কোন ভ্রান্ত ধারনা সহজেই পরাজিত করা যাবে এবং পৌরানিক কোন সাজানো মনগড়া ঘটনা সহজেই জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। নতুন নিয়মের সুসমাচারের পুরোটাই চাক্ষুষ সাক্ষীগণ পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়েই লিখিত হয়েছে এবং পৌলের কিছু কিছু পত্র লিখিত হয়েছে ৫০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে এবং পৌল তার সাক্ষ্য যাচাই করার জন্য সমসাময়িক প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে যেতেন (১করিন্থীয় ১৫:৬ পদ)।
সুতরাং নতুন নিয়ম এই সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেয় যে, প্রথম শতাব্দীতে যীশুকে অন্য কোন দেবতার সঙ্গে মিলিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। যখন সাধু পৌল এথেন্সে তার প্রচার কার্য চালাচ্ছিলেন, তখন সমাজের সম্ভ্রান্ত চিন্তাবিদেরা বলেছিলেন যে, “তাকে মনে হচ্ছে তিনি ভিন্ন কোন ঈশ্বরের ব্যাপারে প্রচার করছেন”- কারণ পৌল তখন যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর পুনরুত্থানের ব্যাপারে প্রচার করছিলেন। তারা পৌলকে ধরে এরিওপেগসের সভার সামনে উপস্থিত করলেন। সেখানে তারা পৌলকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যে নতুন শিক্ষা আপনি দিচ্ছেন সেটা কি, তা কি আমরা জানতে পারি? কারণ আপনি এমন কতগুলো কথা বলছেন যা আমদের কানে অদ্ভুত শোনাচ্ছে। সেই জন্য এই সব কথার মানে কী তা আমরা জানতে চাই” (প্রেরিত ১৭:১৮-২০ পদ)। এখানে এটা স্পষ্ট যে, সাধু পৌল যদি অন্যান্য দেবতাদের কথা তাদের কাছে গিয়ে পুনরায় বলতেন, তাহলে এসেন্সবাসীরা তার মতবাদকে ‘নতুন’ এবং ‘অদ্ভুত’ শিক্ষা হিসেবে উল্লেখ করতো না। যদি প্রথম শতাব্দীর পৌরানিক কাহিনীতে দেবতাদের ব্যাপারে মৃত্যুবরণ করে জীবিত হয়ে ওঠার কথা প্রচলিত থাকতো, তাহলে পৌল যখন মৃত্যুঞ্জয়ী প্রভু যীশুর কথা প্রচার করছিলেন, তখন কি এপিকিউরীয় ও স্টোয়িকীয় দলের লোকজন এই মন্তব্য করতো না যে, “এই বিদেশী দেবতাও হোরাস ও মিথরাসের মতই একই দেবতা?”
পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, যেসব লোকেরা বলেছে যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হচ্ছেন পৌরানিক দেবতারদের একটা অনুলিপি মাত্র, তাদের এই মিথ্যা দাবিকে পন্ডিত ব্যক্তিরা যাচাই প্রমাণ দিয়েছেন যে, তাদের এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ২০০০ বছর ধরে সত্য প্রকাশের মাধ্যমে টিকে থাকা নতুন নিয়মের সুসমাচারের সাথে কোনভাবেই সেটা তুলনা করা যায় না। প্রভু যীশু ও অন্যান্য দেবতাদেরকে একই কাতারে বা একই উচ্চতায় দেখানো ভ্রান্ত প্রচেষ্টাগুলো একেবারেই টিকতে পারেনি যখন কিনা আসল পৌরানিক কাহিনীগুলো ভালভাবে যাচাই করে দেখা হয়েছে। তাই প্রভু যীশু যে পৌরানিক গল্পের একজন অনুলিপি বা তাঁকে পৌরানিক গল্প থেকে আনা হয়েছে এই ধারনা শুধুমাত্র কিছু বাছাইকৃত বর্ণনা, পুনরায় সংজ্ঞায়িত শব্দ এবং মিথ্যা অনুমানের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে এবং এগুলো একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা।
যীশু খ্রীষ্ট ইতিহাসে অনন্য, তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। তাঁর চরিত্র বা শিক্ষাগুলো পৃথিবীর অন্য দেবতাদের শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ তিনি এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন, যা শেষ পর্যন্ত একজন ব্যক্তির চিরন্তন গন্তব্য নির্ধারণ করে: আর সেই প্রশ্নটি হলো- ‘‘আমি কে সে বিষয়ে তোমরা কি বল?’’(মথি ১৬:১৫ পদ)।
English
‘‘প্রভু যীশু কি প্রচলিত পুরাণ কাহিনীর কোন চরিত্র? তিনি কি পুরানো ধর্মগুলোতে উল্লিখিত পৌত্তলিক দেবতাদের কোন একজন?’’