প্রশ্ন
সদ্দুকী এবং ফরীশীদের মধ্যে কিসের পার্থক্য?
উত্তর
সুসমাচার প্রায়শই সদ্দুকী এবং ফরীশীদের উল্লেখ করেছে, যেহেতু যীশু প্রায় তাদের সাথে ক্রমাগত দ্বন্দের মধ্যে ছিলেন I সদ্দুকী এবং ফরীশীরা ইস্রায়েলের যিহূদিদের শাসক শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল I দুটি দলের মধ্যে কিছু মিল আছে কিন্তু তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও রয়েছে I
ফরীশী এবং সদ্দুকী উভয়ই খ্রীষ্টের সময় যিহূদি ধর্মের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রদায় ছিল I উভয় দলই মশি এবং ব্যবস্থাকে সম্মান করতেন এবং তাদের উভয়েরই রাজনৈতিক ক্ষমতার একটি পরিমাপ ছিল I প্রাচীন ইসরায়েলের 70 জন সদস্যদের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সানহেদ্রিনের সদ্দুকী এবং ফরীশীরা উভয়েই সদস্য ছিলেন I
ফরীশী এবং সদ্দুকীদের মধ্যে পার্থক্য আমাদের কাছে শাস্ত্রের কয়েকটি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এবং ফরীশীদের বিদ্যমান লেখার মধ্য দিয়ে জানা যায় I ধর্মীয়ভাবে সদ্দুকীরা একটি মতবাদ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে অধিক রক্ষণশীল ছিলেন: তারা শাস্ত্রের পাঠ্যের আক্ষরিক ব্যাখ্যার উপরে জোর দিয়েছিলেন; ফরীশীরা, অন্য দিকে, মৌখিক ঐতিহ্যকে ঈশ্বরের লিখিত বাক্যের সমান কর্ত্তৃত্ব দিতেন I সদ্দুকীরা যদি তানাখের মধ্যে কোনো আদেশ খুঁজে না পেতেন তবে তারা সেটিকে মনুষ্য নির্মিত বলে বাতিল করে দিতেন I
ফরীশী এবং সদ্দুকীদের ধর্মশাস্ত্রের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে, তারা কিছু মতবাদ নিয়ে তর্ক করেছিল তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই I সদ্দুকীরা মৃতদের পুনরুত্থানের বিশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন (মথি 22-23; মার্ক 12:18-27; প্রেরিত 23:8), কিন্তু ফরীশীরা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন I সদ্দুকীরা পরলোককে অস্বীকার করতেন, মনে করতেন যে আত্মা মারা যায়, কিন্তু ফরীশীরা পরকালীন জীবনে এবং ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত পুরস্কার এবং শাস্তিতে বিশ্বাস করতেন I সদ্দুকীরা একটি আত্মিক জগতের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছিল, কিন্তু ফরীশীরা আত্মিক জগতে স্বর্গদূত এবং ভূতদের অস্তিত্ব শিখিয়েছিল I
প্রেরিত পৌল তাদের খপ্পর থেকে রক্ষা পেতে চতুরতার সাথে ফরীশী এবং সদ্দুকীদের ধর্মতাত্ত্বিক পার্থক্যকে ব্যবহার করেন I পৌলকে যিরূশালেমে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তিনি সানহেদ্রিনের সামনে তার আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন I দরবারের মধ্যে কেউ কেউ ফরীশী ও সদ্দূকী ছিলেন জেনে, পৌল ডেকে বললেন, “আমার ভাইগণ, আমি একজন ফরীশী, ফরীশীদের বংশধর I মৃতদের পুনরুত্থানের আশার কারণে বিচারে দাঁড়িয়ে আছি” (প্রেরিত 23:6) I পুনরুত্থান সম্বন্ধে পৌলের উল্লেখ ফরীশী এবং সদ্দুকীদের মধ্যে একটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল, সমাবেশকে বিভক্ত করেছিল এবং “একটি বড় সোরগোল” সৃষ্টি করেছিল (পদ 9) I রোমীয় সেনাপতি যিনি এই কার্যক্রম দেখেছিলেন, তাদের হিংসার মধ্য থেকে পৌলকে উদ্ধার করতে দাঙ্গার মধ্যে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন (পদ 10) I
সানাজিকভাবে সদ্দূকীরা ফরীশীদের চেয়ে সভ্রান্ত ও অভিজাত ছিলেন I সদ্দূকীরা ধনী হতে এবং আরও শক্তিশালী পদে আসীন হতে ইচ্ছা করতেন I প্রধান পুরোহিত এবং মহা যাজক ছিলেন সদ্দূকীরা, এবং তারা সানহেদ্রিনের অধিকাংশ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন I ফরীশীরা সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের বেশি প্রতিনিধি ছিলেন এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন I সদ্দূকীদের ক্ষমতার স্থান ছিল যিরূশালেমের মন্দির; ফরীশীরা সমাজগৃহগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন I সদ্দূকীরা রোমের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন এবং ফরীশীদের অপেক্ষা রোমীয় ব্যবস্থার সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছিলেন I ফরীশীরা প্রায়শই গ্রীক সংস্কৃতিকরণের প্রতিরোধ করতেন, কিন্তু সদ্দূকীরা এটিকে স্বাগত জানাতেন I
সম্ভবত পূর্ববর্তী লোকেদের মৌখিক ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে, সদ্দূকীদের চেয়ে যীশুর ফরীশীদের সাথে বেশি দৌড়-ঝাঁপ ছিল I “তোমরা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে উপেক্ষা কর এবং নিজেদের ঐতিহ্যকে প্রতিস্থাপন কর,” যীশু তাদের বললেন (মার্ক 7:8 BSI; এছাড়াও দেখুন মথি 9:14; 15:1–9; 23:5, 16, 23, মার্ক 7:1–23; এবং লুক 11:42) যেহেতু সদ্দূকীরা ধর্মের চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল, তারা যীশুকে উপেক্ষা করেছিল, যতক্ষণ না তারা ভয় করতে শুরু করলো যে তিনি অবাঞ্ছিত রোমীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন এবং স্থিতাবস্থা বিপর্যয় করতে পারেন I ঠিক সেই সময়েই সদ্দূকী এবং ফরীশীরা তাদের মতভেদ দূর করলেন, একত্রিত হয়ে খ্রীষ্টকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলেন (যোহন 11:48-50; মার্ক 14:53; 15:1) I
যিরূশালেমের ধ্বংসের পরে সদ্দূকীরা একটি গোষ্ঠী হিসাবে অস্তিত্ব বন্ধ করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ফরীশীদের উত্তরাধিকার টিকে ছিল I প্রকৃতপক্ষে ফরীশীরা মিশনা সংকলনের জন্য দায়ী ছিলেন, মন্দির ধ্বংসের বাইরে যিহূদি ধর্মের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল I এইভাবে ফরীশীরা আধুনিক রাব্বি সংক্রান্ত যিহূদি ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন I
English
সদ্দুকী এবং ফরীশীদের মধ্যে কিসের পার্থক্য?