প্রশ্ন
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কি কোন যুক্তি আছে?
উত্তর
ঈশ্বরের অস্তিত্বের জন্য কোন চূড়ান্ত যুক্তি আছে কি না এই প্রশ্নটি ইতিহাস জুড়ে বিতর্কিত হয়েছে, অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোকেরা এই বিতর্কের উভয় পক্ষকেই গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে যুক্তিগুলি এমন এক সংগ্রামী আত্মাকে গ্রহণ করেছে যা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে সাহসী যে কাউকে ভ্রান্ত এবং যুক্তিহীন বলে অভিযুক্ত করে। কার্ল মার্কস জোর দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরকে বিশ্বাসী যে কারও অবশ্যই একটি মানসিক ব্যাধি রয়েছে যা অশুদ্ধ চিন্তাভাবনা সৃষ্টি করে। মনোচিকিৎসক সিগমন্ড ফ্রয়েড লিখেছেন যে, একজন ব্যক্তি যিনি সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন, তিনি বিভ্রান্তকর ছিলেন এবং শুধুমাত্র একটি “ইচ্ছাপূরণ” উৎপাদকের কারণে সেই বিশ্বাসগুলিকে ধরে রেখেছিলেন যেটিকে ফ্রয়েড একটি অযৌক্তিক অবস্থান বলে বিবেচনা করেছিলেন। দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, বিশ্বাস হলো সত্য কি তা জানতে চাওয়ার সমান। ইতিহাসের এই তিন ব্যক্তিত্বের কণ্ঠস্বর (অন্যান্যদের সাথে) এখন কেবল নতুন প্রজন্মের নাস্তিকদের তোতাপাখির ন্যায় শিখানো হয় যারা দাবি করে যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস বুদ্ধিবৃত্তিগতভাবে অযৌক্তিক।
এটি কি সত্যিই কোন ঘটনা? ঈশ্বরে বিশ্বাস কি যুক্তিযুক্তভাবে একটি অগ্রহণযোগ্য অবস্থানকে ধরে রাখে? ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কি যৌক্তিক এবং যুক্তিযুক্ত যুক্তি আছে? বাইবেলের উল্লেখিত বিষয়ের বাইরে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কি একটি উদাহরণ তৈরি করা যেতে পারে যা পুরানো এবং নতুন উভয় নাস্তিকদের অবস্থাকে খণ্ডন করে এবং একজন সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ দেয়? উত্তর হলো, হ্যাঁ, এটি করা যায়। অধিকন্তু, ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তির বৈধতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নাস্তিকবাদীদের যুক্তিকে বুদ্ধিবৃত্তিগতভাবে দুর্বল দেখানো হয়েছে।
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি- কিছুই না বরং কিছু
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি তৈরি করতে হলে আমাদের অবশ্যই সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে শুরু করতে হবে। আমরা সবচেয়ে মৌলিক অধিবিদ্যামূলক প্রশ্ন দিয়ে শুরু করিঃ “কেন আমাদের কাছে কিছুই না, বরং কিছু আছে?” এটিই অস্তিত্বের মৌলিক প্রশ্ন- কেন আমরা এখানে আছি; বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এখানে কিছুই না কেন? এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে একজন ধর্মতাত্ত্বিক বলেছেন, “এক অর্থে মানুষ ঈশ্বর সম্পর্কে প্রশ্ন করে না, বরং তাঁর অস্তিত্বই ঈশ্বর সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে ধরে।”
এই প্রশ্নটি বিবেচনা করার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কিছু না, বরং কিছু আছে- এর সম্ভাব্য চারটি উত্তর রয়েছেঃ
১. বাস্তবতা একটি বিভ্রম।
২. বাস্তবতা স্ব-সৃষ্ট।
৩. বাস্তবতা স্ব-অস্তিত্বশীল (অনন্ত বা চিরন্তন)।
৪. বাস্তবতা এমন কিছু দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যা স্ব-অস্তিত্বশীল।
সুতরাং, সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত সমাধান কোনটি? চলুন বাস্তবতাকে কেবল একটি বিভ্রম বলে শুরু করা যাক, যা প্রাচ্যের ধর্ম বিশ্বাস করে। এই বিকল্পটি বহু শতাব্দী আগে দার্শনিক রেনে দেকার্তের দ্বারা বাতিল করা হয়েছিল, যিনি এই বক্তব্যের জন্য বিখ্যাত, “আমি মনে করি, তাই আমি আছি।” দেকার্ত, যিনি একজন গণিতবিদ ছিলেন, তিনি এই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি চিন্তা করেন তবে তাকে অবশ্যই “হতে হবে”। অন্য কথায়, “আমি মনে করি, তাই আমি বিভ্রম নই।” বিভ্রমের জন্য ভ্রম অনুভব করতে কিছু প্রয়োজন, এবং অধিকন্তু, আপনি আপনার অস্তিত্ব প্রমাণ না করে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করতে পারবেন না; এটি একটি স্ব-পরাজিত যুক্তি। সুতরাং, বাস্তবতা একটি বিভ্রম হওয়ার সম্ভাবনা দূরীভূত হয়।
বাস্তবতার পরবর্তী বিকল্প হলো স্ব-সৃষ্ট। যখন আমরা দর্শন অধ্যয়ন করি, তখন আমরা “বিশ্লেষণমূলকভাবে ভ্রান্ত” বিবৃতি সম্পর্কে শিখি, যার অর্থ সংজ্ঞা অনুসারে তারা ভ্রান্ত। সহজ কারণের জন্য বাস্তবতা স্ব-সৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা হলো সেই ধরনের বিবৃতিগুলোর মধ্যে একটি যে, কোন কিছু নিজের আগে হতে পারে না। বিবর্তনবাদে একে কখনও কখনও “স্বতঃস্ফূর্ত প্রজন্ম” হিসেবে উল্লেখ করা হয়- কোন কিছু নয় তা থেকে কোন কিছু আসে- এমন একটি অবস্থান যা অল্পসংখ্যক, শুধুমাত্র যদি কোন যুক্তিসঙ্গত লোক ধরে থাকে, কারণ আপনি কোন কিছু নয় তা থেকে কোন কিছু পেতে পারেন না। এমনকি, নাস্তিক ডেভিড হিউমও বলেছেন, “আমি কখনও এত অযৌক্তিক প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে দাঁড় করাই নি যে, কারণ ছাড়াই কিছু হতে পারে।। যেহেতু কোন কিছু নয় তা থেকে কোন কিছু আসতে পারে না, সেহেতু বাস্তবতা বিকল্প স্ব-সৃষ্ট হওয়াকে বাতিল করা হয়।
এখন আমাদের কাছে মাত্র দু’টি বিকল্প অবশিষ্ট আছে- একটি অনন্ত বা চিরন্তন বাস্তবতা যা চিরন্তন এমন কিছু দ্বারা সৃষ্ট: একটি চিরন্তন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বা একজন চিরন্তন সৃষ্টিকর্তা। ১৮ শতাব্দীর ধর্মতাত্ত্বিক যোনাথন এডওয়ার্ডস এই সংমিশ্রিত যুক্তির সারসংক্ষেপ করেছেন এভাবেঃ
• কোন কিছু আছে।
• কোন কিছুই কোন কিছু সৃষ্টি বা তৈরি করতে পারে না।
• অতএব, একটি প্রয়োজনীয় বা চিরন্তন “কোন কিছু” বিদ্যমান।
লক্ষ্য করুন, আমাদের অবশ্যই একটি চিরন্তন “কোন কিছুতে” ফিরে যেতে হবে। যে নাস্তিক একজন চিরন্তন স্রষ্টাকে বিশ্বাস করার জন্য ঈশ্বরের বিশ্বাসীকে উপহাস করে তাকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং একটি চিরন্তন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আলিঙ্গন করতে হবে; এই একমাত্র উপায় তিনি বেছে নিতে পারেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, প্রমাণ কোথায় নিয়ে যায়? প্রমাণ কি বিষয় বা বস্তুর আগে মনের বা মনের আগে বিষয় বা বস্তুকে নির্দেশ করে?
আজ অবধি, সমস্ত বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক প্রমাণগুলি একটি চিরন্তন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থেকে এবং একটি চিরন্তন সৃষ্টিকর্তার দিকে নির্দেশ করে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৎ বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি শুরু ছিল এবং যার শুরু আছে তা চিরন্তন নয়। অন্য কথায়, যার শুরু আছে, তার একটি কারণ আছে, এবং যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি শুরু থাকে তবে তার একটি কারণ ছিল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি শুরু ছিল তা প্রমাণ দ্বারা আন্ডারস্কোরড করা হয়েছে যেমন তাপগতিবিদ্যার সূত্র, ১৯০০ এর দশকের শুরুর দিকে আবিষ্কৃত বিগ ব্যাং এর বিকিরণ প্রতিধ্বনি, এবং আইনস্টাইন এর আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব, এই সত্য বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রসারিত হচ্ছে এবং এটি একটি একক শুরুতে ফিরে পাওয়া যেতে পারে। এই সব কিছুই প্রমাণ করে যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চিরন্তন নয়।
উপরন্তু, কার্যকারণকে ঘিরে যে আইনগুলি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে তা এই সাধারণ সত্যের জন্য আমরা যা জানি তার চূড়ান্ত কারণঃ একটি প্রভাব অবশ্যই তার কারণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এটি সত্য হওয়ায় কোন নাস্তিক ব্যাখ্যা করতে পারে না যে, কীভাবে একটি নৈর্ব্যক্তিক, উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন এবং অনৈতিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘটনাক্রমে এমন প্রাণী (আমাদের) সৃষ্টি করেছে যারা ব্যক্তিত্বে পূর্ণ এবং উদ্দেশ্য, অর্থ এবং নৈতিকতায় আচ্ছন্ন। একটি কার্যকারণ দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের বিষয় একটি প্রাকৃতিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে যা বিদ্যমান সবকিছুর জন্ম দেয়। তাই সবশেষে বলা যায় যে, একটি চিরন্তন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণাকে বাতিল করা হয়।
দার্শনিক জে.এস.মিল (খ্রীষ্টিয়ান নন) এর সারসংক্ষেপ প্রদান করেন যেখানে এখন আমরা অবস্থান করছি, “এটা সুস্পষ্ট যে, শুধুমাত্র মনই মন তৈরি করতে পারে।” যেমন আমরা জানি, একমাত্র যৌক্তিক এবং যুক্তিসঙ্গত উদাহরণ হলো একজন চিরন্তন স্রষ্টা হলেন তিনি যিনি বাস্তবতার দাবীদার। অথবা বিবৃতিগুলিকে একটি যৌক্তিক স্থানে রাখাঃ
• কোন কিছু আছে।
• কোন কিছু নয় তা থেকে কোন কিছু আপনি পান না।
• তাই একটি প্রয়োজনীয় এবং চিরন্তন “কোন কিছু” বিদ্যমান।
• শুধুমাত্র দু’টি বিকল্প হলো একটি চিরন্তন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং একজন চিরন্তন সৃষ্টিকর্তা।
• অতএব, একজন চিরন্তন সৃষ্টিকর্তা বিদ্যমান।
পূর্ববর্তী নাস্তিক লি স্ট্রোবেল, যিনি বহু বছর আগে এই চূড়ান্ত ফলাফলে এসেছিলেন, তিনি মন্তব্য করেছেন, “মূলত আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, নাস্তিক থাকতে হলে আমাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, কোন কিছুই নয় এমন কিছু সবকিছু উৎপন্ন করে না; অ-জীবন জীবন উৎপন্ন করে; এলোমেলো অবস্থা সুক্ষ্ম ঐকতান উৎপন্ন করে; বিশৃঙ্খলতা তথ্য উৎপন্ন করে; অজ্ঞানতা বা অসাড়তা জ্ঞান বা চেতনা উৎপন্ন করে; এবং অকারণ কারণ উৎপন্ন করে। বিশ্বাসের সেই পরিবর্তন আমার পক্ষে নেওয়া খুব বড় ছিল, বিশেষতঃ ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে ইতিবাচক দিকের আলোকে- অন্যকথায়, আমার মতে খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বদর্শন নাস্তিক বিশ্বদর্শনের চেয়ে অনেক ভাল প্রমাণের সামগ্রিকতার জন্য দায়ী।”
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি- সৃষ্টিকর্তাকে জানা
কিন্তু পরবর্তী প্রশ্নটি আমাদের মোকাবিলা করতে হবেঃ যদি একজন চিরন্তন সৃষ্টিকর্তা থাকেন (এবং আমরা দেখেছি যে, তিনি আছেন), তবে তিনি কি ধরনের সৃষ্টিকর্তা? তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আমরা কি তাঁর সম্পর্কে কিছু অনুমান করতে পারি? অন্য কথায়, আমরা কি এর প্রভাব দ্বারা এর কারণ বুঝতে পারি? এর উত্তর হলো হ্যাঁ, আমরা করতে পারি, আর নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি থেক আমরা এও অনুমান করতে পারিঃ
• তাঁকে অবশ্যই অপার্থিব প্রকৃতির হতে হবে (যেমন তিনি সময় ও স্থান সৃষ্টি করেছেন)।
• তাঁকে অবশ্যই পরাক্রমশালী হতে হবে (অধিক পরিমাণে)।
• তাঁকে অবশ্যই চিরন্তন (স্ব-অস্তিত্বশীল) হতে হবে।
• তাঁকে অবশ্যই সর্বত্র বিরাজমান হতে হবে (তিনি স্থান সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি এটির দ্বারা সীমাবদ্ধ নন)।
• তাঁকে অবশ্যই অসীম এবং অপরিবর্তনীয় হতে হবে (তিনি সময় সৃষ্টি করেছেন)।
• তাঁকে অবশ্যই বস্তুহীন বা অশরীরী হতে হবে, কারণ তিনি স্থান/শরীরকে অতিক্রম করেন।
• তাঁকে অবশ্যই স্বকীয় হতে হবে (নৈর্ব্যক্তিক ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে পারেন না)।
• তাঁকে অবশ্যই সীমাহীন এবং একক হতে হবে, কারণ আমরা দু’টি সীমাহীন অবস্থায় থাকতে পারি না।
• তাঁকে অবশ্যই বৈচিত্র্যময় হতে হবে বটে, কিন্তু একতা থাকতে হবে, কারণ প্রকৃতিতে ঐক্য ও বৈচিত্র্য বিদ্যমান।
• তাঁকে অবশ্যই বুদ্ধিমান (সর্বোচ্চ মানের) হতে হবে। শুধুমাত্র জ্ঞান সম্বন্ধীয় সত্তাই জ্ঞান সম্বন্ধীয় সত্তা তৈরি করতে পারে।
• তাঁকে অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক হতে হবে, কারণ তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
• তাঁকে অবশ্যই নৈতিক হতে হবে (প্রদানকারী ছাড়া কোন নৈতিক আইন থাকতে পারে না)।
• তাঁকে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে (অথবা কোন নৈতিক আইন দেওয়া হতো না)।
এই বিষয়গুলি সত্য হওয়ায়, আমরা এখন জিজ্ঞাসা করি যে, বিশ্বের কোন ধর্ম এমন একজন সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করে কি না। এর উত্তর হলো হ্যাঁ, বাইবেলের ঈশ্বর এই রেখাচিত্রটিতে সম্পূর্ণভাবে সমন্বয় সাধন করে। তিনি অপার্থিব (আদিপুস্তক ১:১ পদ); পরাক্রমশালী (যিরমিয় ৩২:১৭ পদ); অনন্ত বা চিরন্তন (গীতসংহিতা ৯০:২ পদ); সর্বত্র বিরাজমান (গীতসংহিতা ১৩৯:৭ পদ); অসীম/অপরিবর্তনীয় (মালাখি ৩:৬ পদ); বস্তুহীন বা অশরীরী (যোহন ৫:২৪ পদ); স্বকীয় (আদিপুস্তক ৩:৯ পদ); অপরিহার্য (কলসীয় ১:১৭ পদ); অসীম বা সীমাহীন/একক (যিরমিয় ২৩:২৪, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ পদ); বৈচিত্র্যময় কিন্তু ঐক্যবদ্ধ (মথি ২৮:১৯ পদ), বুদ্ধিমান (গীতসংহিতা ১৪৭:৪-৫ পদ), উদ্দেশ্যমূলক (যিরমিয় ২৯:১১ পদ); নৈতিক বা নীতিবান (দানিয়েল ৯:১৪ পদ); এবং যত্নশীল (১পিতর ৫:৬-৭ পদ)।
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি- নাস্তিকতার ত্রুটিসমূহ
ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়টি সম্বোধন করার শেষ বিষয় হলো নাস্তিকের অবস্থান আসলে কতটা ন্যায়সঙ্গত। যেহেতু নাস্তিক দাবী করে যে, আস্তিকের অবস্থান অযৌক্তিক, তাই প্রশ্নটিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তার দিকে লক্ষ্য করাই যুক্তিসঙ্গত। প্রথম বিষয়টি বুঝতে হবে যে, নাস্তিক যা দাবী করে- “কোন ঈশ্বর নাই” অর্থাৎ “নাস্তিকতাকে”- একটি দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধারণা করা অক্ষমতার সামিল। আইনবিষয়ক পণ্ডিত ও দার্শনিক ব্যক্তিত্ব মর্টিমান এডলার বলেন, “একটি ইতিবাচক অস্তিত্বের উপস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু একটি নেতিবাচক অস্তিত্বের উপস্থাপনা- যা কোন কিছুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে- প্রমাণ করতে পারে না।” উদাহরণস্বরূপ কেউ দাবী করতে পারে যে, একটি লাল ঈগল আছে এবং অন্য কেউ দাবী করতে পারে যে, লাল ঈগলের অস্তিত্ব নেই। পূর্ববর্তীটিকে তার দাবী প্রমাণ করার জন্য শুধুমাত্র একটি একক লাল ঈগল খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু পরেরজনকে অবশ্যই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করতে হবে এবং আক্ষরিক অর্থে একযোগে প্রতিটি জায়গায় থাকতে হবে যাতে তিনি কোথাও এবং কোন সময়ে একটি লাল ঈগলের সন্ধান পান, যা করা অসম্ভব। এই কারণেই বুৎপত্তিগতভাবে সৎ নাস্তিকেরা স্বীকার করবে যে, তারা প্রমাণ করতে পারে না যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
এরপর সত্য দাবিগুলির গুরুত্ব এবং নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণের পরিমাণকে ঘিরে যে সমস্যাটি রয়েছে তা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ- যদি কেউ আপনার সামনে লেবু শরবতের দু’টি পাত্র রাখে এবং বলে যে, একটি অন্যটির চেয়ে বেশি টক হতে পারে, যেহেতু বেশি টকের পানীয় পান করার পরিণতি খারাপ কিছু হবে না, সেহেতু আপনার নির্বাচনের জন্য প্রচুর পরিমাণ প্রমাণেরও প্রয়োজন হবে না। যাহোক, নিমন্ত্রণকর্তা যদি এক কাপে মিষ্টি যোগ করে কিন্তু অন্য কাপে সে ইঁদুরের বিষ রাখে, তবে আপনি তা বেছে নেবার আগে বেশ কিছু প্রমাণ পেতে চাইবেন।
এটি হলো নাস্তিকতা এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একজন ব্যক্তির অবস্থান। যেহেতু নাস্তিকতায় বিশ্বাসের ফলে অপূরণীয় এবং চিরন্তন পরিণতি হতে পারে, তাই মনে হয় নাস্তিককে তার অবস্থান সমর্থন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাহ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে বাধ্য করা উচিত, কিন্তু তিনি তা করতে পারেন না। নাস্তিকতা কেবল এটির অভিযোগের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের জন্য পরীক্ষাটি পূরণ করতে পারে না। তার পরিবর্তে, নাস্তিক এবং যাদেরকে তিনি তার অবস্থানের তর্কে পরাভূত করান তারা তাদের সীমানা অতিক্রম করে অনন্তকালের দিকে ধাবিত হন এবং আশা করেন যে, তারা এই অপ্রীতিকর সত্যটি খুঁজে পাবেন না যে, অনন্তকাল আসলেই বিদ্যমান। যেভাবে মর্টিমার এডলার বলেছেন, “জীবন এবং কর্মের জন্য আরও বেশি পরিণতি হয় অন্য যে কোন মৌলিক প্রশ্নের চেয়ে ঈশ্বরের নিশ্চয়তা বা তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার থেকে।”
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি- উপসংহার
তাহলে ঈশ্বরে বিশ্বাসের কি বুদ্ধিবৃত্তিক কোন প্রমাণ আছে? ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কি ধরনের যুক্তিযুক্ত, যৌক্তিক এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ বা যুক্তি আছে? এটিকে হতে হবে পরিপূর্ণভাবে। যদিও ফ্রয়েডের মতো নাস্তিকেরা বিশ্বাস করে যে, যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তাদের একটি ইচ্ছা-পূরণের আকাঙ্ক্ষা আছে, সম্ভবত ফ্রয়েড এবং তার অনুসারীরাই এমনটি করে থাকেঃ তাদের আশা এবং ইচ্ছা এরূপ যে, ঈশ্বর নেই, কোনরূপ জবাবদিহিতা নেই, আর তাই তার কোন বিচারও নেই। কিন্তু ফ্রয়েডের এই যুক্তিকে খণ্ডণ করে পবিত্র বাইবেল যেখানে ঈশ্বর নিজেই তাঁর অস্তিত্বকে নিশ্চিত করেছেন এবং এই সত্যটি নিশ্চিত করেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে বিচার তাদের জন্য আসছে যারা নিজের মধ্যে এই সত্যটি জানেন যে, তিনি আছেন কিন্তু সেই সত্যকে গোপন করে থাকে (রোমীয় ১:২০ পদ)। আর যারা তাঁর এই প্রমাণে সাড়া দেয় যে, প্রকৃতপক্ষে একজন সৃষ্টিকর্তা বিরাজমান, তিনি তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাদের পরিত্রাণের ব্যব্স্থা করে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, “কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন” (যোহন ১:১২ পদ)।
English
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কি কোন যুক্তি আছে?