settings icon
share icon
প্রশ্ন

আপনি কি আদিপুস্তকটির সারমর্ম করতে পারেন? সম্পূর্ণ আদিপুস্তকটি কি সর্ম্পকে লিখিত?

উত্তর


আদিপুস্তকটির লেখক চিহ্নিত করা হয় নাই। ঐতিহ্যগতভাবে, লেখক সর্বদা মোশি ছিলেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। আদিপুস্তকের লেখক মোশি তা অস্বীকার করার চূড়ান্ত কোন কারণ নাই।

লেখার তারিখঃ এটি কখন লেখা হয়েছিল আদিপুস্তক তা উল্লেখ করে না। লেখকের লেখার তারিখ সম্ভবত ১৪৪০ থেকে ১৪০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের মধ্যে, মোশির ইস্রায়েলীয়দের মিসর থেকে বের করে আনার সময় এবং তার মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়।

লেখার উদ্দেশ্যঃ আদিপুস্তককে কখনও কখনও সমগ্র বাইবেলের “মূল বা প্রধান পটভূমি” বলা হয়েছে। বাইবেলের বেশির ভাগ প্রধান মতবাদ আদিপুস্তকে “মূল ভিত্তি” বা “ইঙ্গিত” আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। মানুষের পতনের সাথে সাথে, ঈশ্বরের পরিত্রাণ বা মুক্তির প্রতিশ্রুতি লিপিব্দধ করা হয়েছে (আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ)। সৃষ্টির মতবাদ, পাপের অভিযোগ, ন্যায্যতা, প্রায়শ্চিত্ত, লম্পটতা, ক্রোধ, করুণা, সার্বভৌমত্ব, দায়িত্ব এবং আরও অনেক কিছু আদিপুস্তক নামক এই মূল পুস্তকটিতে সম্বোধন করা হয়েছে।

জীবনের অনেক বড় প্রশ্নের উত্তর আদিপুস্তকে পাওয়া যায়। (১) আমি কোথা থেকে এসেছি? (ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন- আদিপুস্তক ১:১ পদ), (২) কেন আমি এখানে? (আমরা এখানে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক রাখতে এসেছি- আদিপুস্তক ১৫:৬ পদ), (৩) আমি কোথায় যাচ্ছি? (মৃত্যুর পরে আমাদের একটি গন্তব্য আছে- আদিপুস্তক ২৫:৮ পদ)। বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, ধর্মতত্ত্ববিদ, গৃহিণী, কৃষক, ভ্রমণকারী এবং পুরুষ বা নারীকে আহবান করা হয়ে থাকে। এটি মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনার গল্প, বাইবেলের যথাযথ আরম্ভ।

মূল পদঃ আদিপুস্তক ১:১, “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডণ ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন।”

আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে লেখা আছে, “আর আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশ ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চুর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।”

আদিপুস্তক ১২:২-৩ পদ আমাদের বলে যে, “আমি তোমা হইতে এক মহা জাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্বাদ করিয়া তোমার নাম মহৎ করিব, তাহাতে তুমি আশীর্বাদের আকর হইবে। যাহারা তোমাকে আশীর্বাদ করিবে, তাহাদিগকে আমি আশীর্বাদ করিব, যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে, তাহাকে আমি অভিশাপ দিব; এবং তোমাতে ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্বাদপ্রাপ্ত হইবে।”

আবার আদিপুস্তক ৫০:২০ পদে লেখা আছে, “তোমরা আমার বিরুদ্ধে অনিষ্ট কল্পনা করিয়াছিলে বটে, কিন্তু ঈশ্বর তাহা মঙ্গলের কল্পনা করিলেন; অদ্য যেরূপ দেখিতেছ, এইরূপে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা করাই তাঁহার অভিপ্রায় ছিল।”

সংক্ষিপ্ত সারমর্মঃ আদিপুস্তককে দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে: আদিম ইতিহাস এবং পিতৃতান্ত্রিক ইতিহাস। আদিম ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে (১) সৃষ্টি (আদিপুস্তক ১-২ অধ্যায়); (১) মানুষের পতন (আদিপুস্তক ৩-৫ অধ্যায়); (৩) বন্যা (আদিপুস্তক ৬-৯ অধ্যায়) এবং (৪) বংশের বিবরণ (আদিপুস্তক ১০-১১অধ্যায়)। পিতৃতান্ত্রিক ইতিহাস চারজন মহান ব্যক্তির জীবন লিপিবদ্ধ করে: (১) অব্রাহাম (আদিপুস্তক ১২-২৫:৮ অধ্যায়); (২) ইস্হাক (আদিপুস্তক ২১:১-৩৫-২৯ অধ্যায়); (৩) যাকোব (আদিপুস্তক ২৫:২১-৫০:১৪ অধ্যায়); এবং (৪) যোষেফ (আদিপুস্তক ৩০:২২-৫০:২৬ অধ্যায়)।

ঈশ্বর একটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন যা ছিল ভাল এবং পাপমুক্ত। ঈশ্বর তাঁর সাথে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখার জন্য মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আদম এবং হবা পাপ করেছিলেন এবং এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে মন্দতা ও মৃত্যু নিয়ে আসেন। পৃথিবীতে মন্দতার পরিমাণ অতিশয় বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যেও তিনি একটি মাত্র পরিবার খুঁজে পান যারা তাঁর বাধ্য ছিলেন। ঈশ্বর মন্দতাকে মুছে ফেলতে বন্যা পাঠালেন, কিন্তু নোহ এবং তার পরিবারকে জাহাজে রেখে সমস্ত পশুপাখিকে রক্ষা করলেন। বন্যার পর আবার মানবজাতি বহু সংখ্যক হয় এবং সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ঈশ্বর অব্রাহামকে মনোনীত করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি একটি মনোনীত লোক এবং অবশেষে প্রতিশ্রুত মশীহ সৃষ্টি করবেন। মনোনীত বংশ অব্রাহামের পুত্র ইস্হাক এবং ইস্হাকের পুত্র যাকোবকে দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বর যাকোবের নাম পরিবর্তন করে ইস্রায়েল রাখলেন, এবং তার বারো পুত্র ইস্রায়েলের বারো গোত্রের পুর্বপুরুষ হয়ে উঠল। তাঁর সার্বভৌমত্বে, ঈশ্বর যাকোবের পুত্র যোষেফকে তার ভাইদের ঘৃণ্য কাজের মধ্য দিয়ে মিসরে পাঠিয়েছিলেন। ভাইদের দ্বারা মন্দ এই কাজটি ঈশ্বরের দ্বারা ভাল করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল এবং অবশেষে যাকোব এবং তার পরিবারকে যোষেফের দ্বারা একটি বিধ্বংসী দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করা হয়েছিল যিনি মিসরে মহান ক্ষমতায় উত্থিত হয়েছিলেন।

পূর্বাভাসঃ নতুন নিয়মের অনেক বিষয়গুলোর ভিত্তি বা সূত্র আদিপুস্তকে রয়েছে। যীশু খ্রীষ্ট হলেন সেই নারীর বংশ যিনি শয়তানের শক্তিকে ধ্বংস করবেন (আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ)। অব্রাহামের মতো তার পুত্রকে বলি উৎসর্গের মাধ্যমে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য ঈশ্বরের পরিকল্পনাটি ছিল ভালোর উদ্দেশ্যে, যদিও যারা যীশুকে ক্র‍ুশবিদ্ধ করেছিল তারা মন্দের জন্য এটি করেছিল। বাইবেলে চিত্রিত অনেক বেছে নেওয়ার মধ্যে নোহ এবং তার পরিবারই হল প্রথম। প্রবল প্রুতিকূলতা এবং কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ঈশ্বর নিজের জন্য একটি বেছে নেওয়া পরিবারকে তাদের নিরাপদে রেখেছিলেন। বেছে নেওয়া ইস্রায়েলীয়েরা বাবিলের বন্দীদশা থেকে যিরুশালেমে ফিরে এসেছিল; যিশাইয় এবং যিরূমিয় পুস্তকে বর্ণিত নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর বেছে নেওয়াদের রক্ষা করেছিলেন; বেছে নেওয়া ৭০০০ পুরোহিত ঈষেবলের ক্রোধ থেকে লুকিয়ে ছিল; ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, বেছে নেওয়া যিহূদীরা একদিন তাদের সত্যিকারের মশীহকে গ্রহণ করবে (রোমীয় ১১ অঃ)। অব্রাহামের দ্বারা প্রদর্শিত বিশ্বাস ঈশ্বরের দান ও যিহূদী এবং পরজাতীয় উভয়ের জন্যই পরিত্রাণের ভিত্তি হবে (ইফিষীয় ২:৮-৯, ইব্রীয় ১১ অঃ)।

কার্যকরী প্রয়োগঃ আদিপুস্তকের অতি গুরুত্বর্ণ বিষয় হল ঈশ্বরের চিরন্তন অস্তিত্ব এবং তাঁর সৃষ্ট জগত। ঈশ্বরের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য লেখকের পক্ষে কোন প্রচেষ্টা নাই, তিনি সহজভাবে বলেছেন যে, ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তিনি সর্বদা ছিলেন এবং সর্বদা থাকবেন। একইভাবে, যারা তাদের অস্বীকার করবে তাদের দাবি সত্ত্বেও আদিপুস্তকের সত্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। সংস্কৃতি, জাতীয়তা বা ভাষার কথা চিন্তা না করে সকল মানুষ সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু পাপের কারণে, পতনের সময়ে পৃথিবীতে প্রবর্তিত, আমরা তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র জাতি, ইস্রায়েলীয়দের মাধ্যমে, মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের পরিত্রাণের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়েছিল এবং সবার জন্য সহজলভ্য করা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনাতে আমরা আনন্দিত।

ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, জগৎ এবং প্রতিটি জীব সৃষ্টি করেছেন। আমরা আমাদের জীবনের উদ্বেগগুলি পরিচালনা করার জন্য তাঁকে বিশ্বাস করতে পারি। ঈশ্বর একটি আশাহীন পরিস্থিতি নিতে পারেন এবং আশ্চর্যজনক বিষয়গুলি করতে পারেন, যদি আমরা কেবল বিশ্বাস করি এবং বাধ্য থাকি, উদাহরণস্বরূপ- অব্রাহাম এবং সারার নিঃসন্তান থাকা। যোষেফের মতো, আমাদের জীবনেও ভয়ানক এবং অন্যায্য ঘটনা ঘটতে পারে. কিন্তু ঈশ্বর সর্বদা মহত্তর মঙ্গল আনবেন যদি আমরা তাঁর এবং তাঁর সার্বভৌম পরিকল্পনায় বিশ্বাস করি। “আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য করিতেছে” (রোমীয় ৮:২৮ পদ)।

English



বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

আপনি কি আদিপুস্তকটির সারমর্ম করতে পারেন? সম্পূর্ণ আদিপুস্তকটি কি সর্ম্পকে লিখিত?
© Copyright Got Questions Ministries