settings icon
share icon
প্রশ্ন

ঈশ্বরের মহিমা কি?

উত্তর


ঈশ্বরের মহিমা হলো তাঁর আত্মার সৌন্দর্য। এটি একটি নান্দনিক সৌন্দর্য, কোন বস্তুগত সৌন্দর্য নয়, বরং এটি এমন সৌন্দর্য যা তাঁর চরিত্র থেকে উদ্ভাসিত হয়, তিনি যেমন আছেন তেমনটি থেকিই। যাকোব ১:১০ পদটি যেভাবে বর্ণনা করে তা হলো- একজন ধনবান ব্যক্তির “তার অবনতি বা পতনের শ্লাঘা” করার আহ্বান জানায়, এমন একটি শ্লাঘা বা মহিমা নির্দেশ করে যার অর্থ ধন বা ক্ষমতা যা বস্তুগত কোন সৌন্দর্য নয়। এই মহিমা মুকুট মানুষ বা পৃথিবী পূর্ণ করতে পারে। এটি মানুষের মধ্যে এবং পৃথিবীতে দেখা যায়, কিন্তু এটি তাদের নয়; এটি ঈশ্বরের। মানুষের মহিমা হলো মানুষের আত্মার সৌন্দর্য, যা ভুলে যাওয়া হয়, অবশেষে তা শেষও হয়ে যায়, এবং সেই জন্যই তার পতন ঘটে। কিন্তু ঈশ্বরের মহিমা, যা তাঁর সমস্ত গুণে গুণান্বিত হয়ে একত্রে প্রকাশ পায়, তা কখনও শেষ হয় না। এটি চিরন্তন, অনন্তকালস্থায়ী।

যিশাইয় ৩৭:৭ পদ আমাদের এই কথা বলে যে, ঈশ্বর তাঁর মহিমার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য পদের প্রেক্ষাপটে, এটা বলা যেতে পারে যে, মানুষ ঈশ্বরের “গৌরব” করে; কারণ মানুষের মাধ্যমে ঈশ্বরের মহিমা দেখা যায়- যেমন, প্রেম, প্রশংসা-আরাধনা, সাহসিকতা এবং আরও অনেক কিছু-ঈশ্বরের অন্তর্গত বিষয় যা আমরা আমাদের মধ্যে ধারণ করছি (২করিন্থীয় ৪:৭ পদ)। আমরা হলাম পাত্র যা তাঁর মহিমা “ধারণ” করে। আমরা যা কিছু করতে পারি তার উৎস আমরা একমাত্র ঈশ্বরের মধ্যেই খুঁজে পেতে পারি। একইভাবে ঈশ্বর প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ করেন। প্রকৃতি তাঁর মহিমা প্রদর্শন করে। তাঁর মহিমা মানুষের মনে বস্তুজগতের মাধ্যমে প্রায়শই বিভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছে প্রকাশ পায়। একজন মানুষ পাহাড় দেখে রোমাঞ্চিত হতে পারে, আবার একজন মানুষ সমুদ্রের সৌন্দর্যকে ভালবাসতে পারে। কিন্তু তাদের উভয়ের পিছনে যা আছে (ঈশ্বরের মহিমা) উভয়ই মানুষের সাথে কথা বলে এবং তাদেরকে ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত করে। এভাবে, ঈশ্বর নিজেকে সমস্ত মানুষের কাছে প্রকাশ করতে সক্ষম, এক্ষেত্রে তাদের জাতি/গোত্র, ঐতিহ্য এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থান কোন ব্যাপারই নয়। যেমন গীতসংহিতা ১৯:১-৪ পদে বলে, “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌবর বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম জ্ঞাপন করে। দিবস দিবসের কাছে বাক্য উচ্চারণ করে, রাত্রি রাত্রির কাছে জ্ঞান প্রচার করে। বাক্য নাই, ভাষাও নাই, তাহাদের রব শুনা যায় না। তাহাদের মানরজ্জু সমস্ত পুথিবীতে ব্যাপ্ত, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্যন্ত ব্যাপ্ত।”

গীতসংহিতা ৭৩:২৪ পদ স্বর্গের “সপ্রতাপের” কথা বলে। খ্রীষ্টিয়ানদের মৃত্যুকে “মহিমা প্রাপ্ত” রূপে গণ্য করা হয়ে থাকে। এমনটি আগে প্রচলিত ছিল, যা এই গীতসংহিতা থেকে নেওয়া একটি বাক্যাংশ। খ্রীষ্টবিশ্বাসীরা মারা গেলে তাকে ঈশ্বরের উপস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাঁর উপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঈশ্বরের মহিমা ঘিরে থাকবে। আমাদের সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে ঈশ্বরের সৌন্দর্য আক্ষরিকভাবেই বসবাস করে- তাঁর আত্মার সৌন্দর্য সেখানে থাকবে, কার সেখানেই তাঁর আবাস। আবার, তাঁর আত্মার সৌন্দর্য (অথবা তিনি কে তার সারাংশ) হল তাঁর “মহিমা”। সেই জায়গায়, তাঁর মহিমা মানুষ বা প্রকৃতির মাধ্যমে আসার প্রয়োজন হবে না, বরং তা সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে, ঠিক যেমন ১করিন্থীয় ১৩:১২ পদে বলা হয়েছে, “কারণ এখন আমরা দর্পণে অস্পষ্ট দেখিতেছি, কিন্তু তৎকালে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া দেখিব; এখন আমি কতক অংশে জানিতে পাই, কিন্তু তৎকালে আমি নিজে যেমন পরিচিত হইয়াছি, তেমনি পরিচয় পাইব।”

মানবীয়/জাগতিক অর্থে, মহিমা হলো একটি সৌন্দর্য বা প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা এমন কিছু যা পৃথিবীর বস্তু বা উপাদানের উপর নির্ভর করে (গীতসংহিতা ৩৭:২০; গীতসংহিতা ৪৯:১৭ পদ), এবং সেই অর্থে তা ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু এটি ম্লান হওয়ার কারণ হলো বস্তুগত বিষয়গুলি স্থায়ী হয় না। তারা মারা যায় এবং শুকিয়ে যায়, কিন্তু তাদের মধ্যে যে মহিমা রয়েছে তা ঈশ্বরের জন্য, এবং যখন মৃত্যু বা ক্ষয় বস্তুটিকে গ্রহণ করে, তখন তাঁর কাছে ফিরে আসে। পূর্বে উল্লেখ করা ধনী ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন। উল্লেখিত পদটি আমাদের এই কথা বলে, “ধনবান আপন অবনতির শ্লাঘা করুক, কেননা সে তৃণপুষ্পের ন্যায় বিগত হইবে।” এটার মানে কি? পদটি ধনী ব্যক্তিকে উপদেশ দিচ্ছে যে. তার সম্পদ, শক্তি এবং সৌন্দর্য ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং এই উপলব্ধি দ্বারা নম্র হতে হবে যে, ঈশ্বরই তাকে ধনবান করে তোলেন এবং তাঁর কাছে যা কিছু আছে তিনি তা তাকে দান করেন। আর তাকে এটিও বুঝতে হবে যে, একদিন ঘাসের মতো তার সবকিছু শেষ হয়ে যাবে, আর এর সবকিছুই আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে যিনি মূলতঃ আমাদের মহিমা প্রদান করেন। ঈশ্বরের মহিমাই হলো একটি উৎস, যেখান থেকে সমস্ত ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্র মহিমা প্রবাহিত হয়।

যেহেতু ঈশ্বরই সেই ব্যক্তি যাঁর কাছ থেকে মহিমা আসে, সেহেতু তিনি এই দাবিকে সহ্য করবেন না যে, মহিমা আসে মানুষের কাছ থেকে। যিশাইয় ৪২:৮ পদে আমরা তাঁর মহিমার প্রতি ঈশ্বরের ঈর্ষার উদাহরণ দেখতে পাই। এই ঈর্ষা তাঁর নিজের মহিমার জন্য যা পৌল রোমীয় ১:২১-২৫ পদে বলেছেন যে, যখন মানুষ সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে সৃষ্ট বস্তুর আরাধনা করে তখনই ঈশ্বর ঈর্ষান্বিত হন। অন্য কথায়, তারা অধিকাংশ সময় যে বা যার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের মহিমা আসছে তার দিকে দৃষ্টিপাত করতো, আর এর জন্য তারা ঈশ্বরকে কৃতিত্ব না দিয়ে বরং সেই প্রাণী বা গাছ বা মানুষকে কৃতিত্ব দিতো এবং তারা এমনভাবে উপাসনা করতো যেন এর সৌন্দর্য তার নিজের ভেতর থেকেই উৎপন্ন হয়েছে। এটি প্রতিমা পূজার মূল কেন্দ্র এবং এটি একটি সচরাচর ঘটা একটি বাজে ঘটনা। এখনও যারা জীবিত আছে তারাও অতীতে কিংবা বর্তমানে সেই একই ভুল করে চলেছে। মূল কথা হলো, আমরা সবাই “মানুষের গৌরবের” পক্ষে ঈশ্বরের মহিমাকে “বিনিময়” করে ফেলেছি।

এই ভুলটি অনেক লোক করেই চলেছে: পার্থিব বিষয়, পার্থিব সম্পদ, তাদের নিজস্ব ক্ষমতা বা প্রতিভা বা সৌন্দর্য, বা অন্যান্যদের মধ্যে তারা যে মঙ্গল দেখতে পায় তা-ই বিশ্বাস করে। কিন্তু যখন এই বিষয়গুলি ম্লান বা ব্যর্থ হয়, এককথায় হয়ে থাকে, তখন এই লোকেরাই হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। আমাদের সকলকে যা উপলব্ধি করতে হবে তা হলো, ঈশ্বরের মহিমা অপরিবর্তনীয়, এবং আমরা জীবনের মধ্য দিয়ে যাত্রা করার সাথে সাথে আমরা এটিকে এখানে এবং সেখানে, এই ব্যক্তি বা সেই বনে, অথবা প্রেম বা সাহসিকতাপূর্ণ গল্পে, উপন্যাস কিংবা উপন্যাস নয় বা অলীক কাহিনীতে, অথবা আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে দেখতে পাব। কিন্তু সব কিছুই শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের কাছে ফিরে যায়। আর সবকিছুর একমাত্র পথ বা উপায় হলো ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র যীশু খ্রীষ্ট। আমরা যদি খ্রীষ্টে থাকি, তবে আমরা স্বর্গে তাঁর অনন্য সুন্দর মহিমার সন্ধান লাভ করব। আর তখন আমাদের কিছুই হারিয়ে যাবে না। আমাদের জীবন থেকে যে সব বিষয় ম্লান হয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে, আমরা আবার তাঁর মধ্যে সেই সমস্ত খুঁজে পাব।

English


বাংলা হোম পেজে ফিরে যান

ঈশ্বরের মহিমা কি?
© Copyright Got Questions Ministries