প্রশ্ন
ঈশ্বরকে সত্য বা যথাযথভাবে জানার পথ বা উপায় কি?
উত্তর
আমাদের সকলের মধ্যে একটি দৃঢ় আকাঙ্খা রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে একে অপরকে জানা। যাঁর বিষয়ে সবচেয়ে বেশী জানা প্রয়োজন সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা। প্রকৃতপক্ষে, যীশু এই শিক্ষা দিলেন যে, অনন্ত জীবন কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপ্তি বা পরিমাপ নয়; এটি হলো একটি সুসম্পর্কঃ “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়” (যোহন ১৭:৩ পদ)।
প্রকৃত বা সত্যরূপে ঈশ্বরকে জানার মূল বিষয় হলো পবিত্র বাইবেলে তিনি নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করেছেন তা খুঁজে বের করা। তিনি চান সবাই তাঁকে জানুক (প্রেরিত ১৭:২৭ পদটি লক্ষ্য করুন)। এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে আমাদের পাপময়তা। আমরা সকলেই পাপী (রোমীয় ৩ অঃ), আর পবিত্রতম ঈশ্বরের সাথে বসবাস করার জন্য যে পবিত্রতার দরকার সেই মানদন্ড আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এক্ষেত্রে রোমীয় ১:২৩ পদ যা বলা হয়েছে তা হলো, “ক্ষয়ণীয় মনুষ্যের ও পক্ষীর ও চতুস্পদের ও সরীসৃপের মূর্তিবিশিষ্ট প্রতিকৃতির সহিত অক্ষয় ঈশ্বরের গৌরব পরিবর্তন করিয়াছি।” সুতরাং, প্রকৃত সত্যরূপে ঈশ্বরকে জানতে হলে প্রথমতঃ আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো আমাদের নিজ নিজ পাপ স্বীকার করা এবং তার জন্য অনুশোচনা করা (প্রেরিত ৩:১৯ পদটি লক্ষ্য করুন)।
পাপ থেকে ফিরে আমাদের অবশ্যই যীশু খ্রীষ্টের প্রতি ফিরতে হবে, যিনি আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করার একমাত্র উদ্ধারকর্তা। যীশুতে কেবলমাত্র পরিত্রাণ (প্রেরিত ৪:১২ পদ)। আমরা বিশ্বাসে যীশুকে গ্রহণ করিঃ “কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন” (যোহন ১:১২ পদ)। যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান আমাদের পাপের ক্ষমা দান করে, আর একমাত্র তিনিই ঈশ্বরকে জানার একমাত্র জ্ঞানের আধার বা পথঃ “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না” (যোহন ১৪:৬ পদ)।
যীশু স্বয়ং ঈশ্বরকে আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন, কাজেই ঈশ্বরকে জানতে হলে আমাদের অবশ্যই যীশুর প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবেঃ যীশু বলেন, “যে আমাকে দেখিয়াছি, সে পিতাকে দেখিয়াছে . . . তুমি কি বিশ্বাস কর না যে, আমি পিতাতে আছি এবং পিতা আমাতে আছেন?” (যোহন ১৪:৯-১০ পদ; তুলনা- যোহন ১৭:৬ পদ)। যীশু তাঁর সমস্ত কাজই স্বর্গীয় পিতার বাধ্যতায় করেছেন (যোহন ৫:১৯ পদ)। যীশুর বলা সমস্ত কথাই সরাসরি পিতার কাছ থেকে এসেছিল (যোহন ১২:৪৯ পদ)। ঈশ্বরকে জানতে হলে, আমাদের অবশ্যই যীশুকে জানতে হবে।
ঈশ্বরকে সত্যরূপে জানার আর একটি প্রধান উপায় হলো পবিত্র বাইবেল পাঠ, যা ঈশ্বরের জীবন্ত বাক্য। পবিত্র বাইবেলে আমরা ঈশ্বরের চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য, তাঁর প্রতিজ্ঞাসমূহ এবং তাঁর ইচ্ছা বা আকাঙ্খার প্রকাশ দেখতে পাই। আমরা সমস্ত বাইবেল জুড়ে দেখতে পাই যে, ঈশ্বর হলেন “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর। ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান” (গীতসংহিতা ৮৬:১৫ পদ)। সমস্ত বাইবেল জুড়ে আমরা ঈশ্বর সম্পর্কে আরও যা জানতে পাই তা হলো তিনি হলেন “মহান, বীর্যবান ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর; তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা করেন না ও উৎকোচ গ্রহণ করেন না” (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭ পদ)। ঈশ্বর কে এ বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্র জুড়ে আমরা আরও যা জানতে পারি তা হলো, তিনি হলেন “যুগপর্যায়েরর রাজা, অক্ষয় অদৃশ্য একমাত্র ঈশ্বর, যুগপর্যায়ের যুগে যুগে তাঁহারই সমাদর ও মহিমা হউক” (১তীমথিয় ১:১৭ পদ)।
এছাড়াও ঈশ্বরকে সত্যরূপে জানার বিষয়টি আসে আমরা পবিত্র শাস্ত্রে যা কিছু পড়েছি তার প্রতি বাধ্য থাকার অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে। আগে আমরা আমাদের উত্তম কাজের দ্বারা উদ্ধার বা মুক্তি পেতাম (ইফিষীয় ২:১০ পদ), আর আমরা যেভাবে সদাপ্রভুকে মান্য করি সেভাবেই আমরা পৃথিবীর কাছে তাঁর নিজেকে প্রকাশ করার চলমান পরিকল্পনার অংশ হয়ে উঠি। আমরা জগতের লবণ ও দীপ্তি (মথি ৫:১৩-১৪ পদ), উদ্দেশ্য এই জগতের কাছে আমাদের মধ্য দিয়ে তাঁর সুগন্ধ পৌঁছে দেওয়া, আর তা যেন অন্ধকারের মধ্যে আলোর মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলে। যীশু স্বয়ং ঈশ্বরের এই ভালবাসার মধ্যমণি হয়েছেন যেন আমরাও আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে সেই ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে পারি (মথি ২২:৩৭-৪০ পদ)।
এইগুলো হলো ঈশ্বরকে সত্যরূপে জানার মূল বিষয়। আর যারা ঈশ্বরকে জানে তাদের অবশ্যই প্রার্থনা, বিশ্বাসীদের সহভাগিতা, আন্তরিকতাপূর্ণ উপাসনা এবং আত্মায় পথ চলার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকতে হবে। যীশু পবিত্র আত্মার বিষয়ে তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, এই জগৎ তাঁর প্রতি ও তাঁর শিষ্যদের জ্ঞানের সহিত বিদ্বেষমূলক আচরণ করবে। যোহন ১৪:১৭ পদে লেখা আছে, “জগৎ তাঁহাকে গ্রহণ করিতে পারে না, কেননা সে তাঁহাকে দেখে না, তাঁহাকে জানেও না; তোমরা তাঁহাকে জান, কারণ তিনি তোমাদের অন্তরে বাস করেন।” ইঁনিই হলেন ঈশ্বরের আত্মা যা আমাদের মধ্যে আছে, “বস্তুতঃ তোমরা দাসত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তপুত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান” (রোমীয় ৮:১৫-১৬ পদ)। খ্রীষ্ট যীশু ও পবিত্র আত্মার সহিত বাস করার মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন ঈশ্বরে পরিপূর্ণ হতে পারে, আর আমরা তখনই তাঁকে অর্থাৎ ঈশ্বরকে সত্যরূপে জানার অনুপম আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি।
English
ঈশ্বরকে সত্য বা যথাযথভাবে জানার পথ বা উপায় কি?