প্রশ্ন
শেষকালের চিহ্নসমূহ কি কি?
উত্তর
৫-৮ পদ আমাদের কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সুত্র প্রদান করে যার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারি যে, শেষকাল খুব আসে এসে গেছে। “কারণ অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মশীহ’, এবং অনেক লোককে ঠকাবে। তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! এতে ভয় পেয়ো না, কারণ এই সব হবেই; কিন্তু তখনও শেষ নয়। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে। কিন্তু এই সব কেবল যন্ত্রণার আরম্ভ।” ভ্রান্ত বা ভন্ড মশীহের সংখ্যা বৃদ্ধি, যুদ্ধবিগ্রহ বেড়ে যাওয়া এবং দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেশী পরিমাণে বেড়ে যাওয়া- এর সবগুলোই হলো শেষকালের চিহ্ন বা লক্ষণসমূহ। এই অনুচ্ছেদগুলোতে যেহেতু আমাদের শেষকাল সম্পর্কে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে সেহেতু আমাদের অন্য কোন কিছুর দ্বারা প্রতারিত হওয়া উচিত নয়। কারণ উপরোক্ত বিষয়গুলো হলো সন্তান প্রসবের আগে যে ব্যথা বা যন্ত্রণা হয় সেইরূপ যন্ত্রণার আরম্ভমাত্র। শেষকাল বা সময় আমাদের কাছে উপস্থিত হওয়ার জন্য স্থির হয়ে আছে।
কোন কোন বাইবেল ব্যাখ্যাকারী এভাবে বলেন যে, প্রতিটি ভূমিকম্প, প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনা বা পরিস্থিতি এবং ইস্রায়েলের উপর প্রতিটি আঘাতই শেষকাল যে খুব দ্রুতই এগিয়ে আসছে তার চিহ্ন বা লক্ষণমাত্র। যখন কোন ঘটনা শেষের দিনগুলোর সংকেত বা ইশারা প্রদান করে তখন এমনটি ভাবার কোন অবকাশ নেই যে, ঐগুলোই শেষকালের অপরিহার্য় এবং একমাত্র লক্ষণসমূহ। প্রেরিত পৌল আমাদের এই বলে সতর্ক করেন যে, শেষের দিনগুলোতে মিথ্যা শিক্ষার মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যাবে। “পবিত্র আত্মা পরিস্কারভাবে বলেছেন, ভবিষ্যতে কিছু লোক খ্রীষ্টিয় ধর্ম-বিশ্বাস থেকে দূরে সবে যাবে এবং ছলনাকারী আত্মা ও মন্দ আত্মাদের শিক্ষার দিকে খুঁকে পড়বে” (১তীমথিয় ৪:১ পদ)। শেষকাল বা শেষের দিনগুলোকে “ভীষণ সময়” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ এই সময় লোকদের মধ্যে শয়তানের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাবে এবং লোকেরা সক্রিয়ভাবে “সত্যের প্রতিরোধ করবে” (২তীমথিয় ৩:১-৯ পদ)। এর সঙ্গে ২থিষলনীকীয় ২:৩ পদটিও লক্ষ্য করা যেতে পারে।
শেষকালের সম্ভাব্য অন্যান্য আরও লক্ষনগুলোর মধ্যে যিরূশালেম মন্দির নির্মাণ, ইস্রায়েল জাতির প্রতি অন্যদের শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব অধিকমাত্রায় বেড়ে যাওয়া এবং সারা বিশ্বব্যাপী এক সরকার প্রতিষ্ঠার দিক এগিয়ে যাওয়া প্রভৃতি নানান বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শেষকালের সবচেয়ে সুস্পষ্ট চিহ্ন হচ্ছে ইস্রায়েল জাতি। ৭০ খ্রীষ্টাব্দের পর নিশ্চিতভাবেই প্রথম বারের মত ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে ইস্রায়েল একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি অব্রাহামের পরবর্তী বংশদরদের কনান দেশটা “চিরকালের সম্পত্তি”- হিসাবে দান করবেন (আদিপুস্তক ১৭:৮ পদ)। যিহিস্কেল ভাববাদী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, জাগতিক এবং আত্মিকভাবে ইস্রায়েল জাতিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে (যিহিস্কেল ৩৭ অধ্যায়)। পৃথিবীর শেষকাল বা শেষ বিচার তত্ত্বে ইস্রায়েল জাতির বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকার কারণে একটি নির্দিষ্ট এবং নিজস্ব ভূমিতে একটি জাতি হিসাবে তাদের দেখতে পাওয়া শেষকাল সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা (দানিয়েল ১০:১৪; ১১:৪১; প্রকাশিত বাক্য ১১:৮ পদ)।
এই সব লক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা শেষকাল সম্পর্কে আরও বেশী জ্ঞান লাভ করতে পারি এবং এর প্রকৃত নিগূঢ় তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারি। যাহোক, শেষকাল বা শেষ সময় যে দ্রুত ঘনিয়ে আসছে তার সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে চিহ্ন বা লক্ষণগুলোর কোন একটিকে আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। শেষ বিচার বিষয়ে আমরা যেন আগেই নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি সেজন্য ঈশ্বর আমাদের সামনে যথেষ্ট চিহ্ন বা লক্ষণসমূহ তুলে ধরেছেন। আমাদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, ঈশ্বর এ জন্যই আমাদের আহ্বান করেছেন।
English
শেষকালের চিহ্নসমূহ কি কি?